Fatty Liver

মেদযুক্ত যকৃত/লিভার (Fatty Liver)




ইদানীং অনেক ফ্যাটি লিভারের (fatty degeneration of liver) রোগী দেখি। বেশীর ভাগ ফ্যাটি লিভার রোগী প্রাথমিকভাবে কোন লক্ষণ, উপসর্গ এবং জটিলতা অনুভব করেন না। এটি মুলত: একটি লাইফস্টাইলের বিশৃংখলাজনিত রোগ।

নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার (Nonalcoholic fatty liver) ডিজিজ তখনই দেখা দেয়, যখন লিভারের চর্বি ভাঙতে সমস্যা হয়, যার ফলে রোগীর লিভারের টিস্যুতে চর্বি জমতে শুরু করে। লিভারে কতটা চর্বি জমেছে তার উপর ভিত্তি করে ফ্যাটি লিভারকে গ্রেড ১, ২, ৩ তে ভাগ করা হয়।

ফ্যাটি লিভারের কিছু রোগীর মধ্যে যে চর্বি জমে তা লিভারে প্রদাহ (inflammation) এবং দাগ (scar) সৃষ্টি করতে পারে। ফ্যাটি লিভারের গুরুতর রূপকে কখনও কখনও নন-অ্যালকোহলিক স্টেটোহেপাটাইটিস (nonalcoholic steatohepatitis) বলা হয়। এটিকে সবচেয়ে গুরুতর পরিণতি হিসাবে দেখা হয়। ফ্যাটি লিভারের এই অবস্থা লিভার ফেইলুর  (liver failure) এর দিকে অগ্রসর হতে পারে।

ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ের পরীক্ষা (Lab tests needed):
1. রক্ত পরীক্ষা: লিভার ফাংশন পরীক্ষা, লিভার এনজাইম পরীক্ষা
2. ইমেজিং পদ্ধতি: আল্ট্রাসাউন্ড, কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফি স্ক্যান (CT Scan) এবং ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (MRI)
3. লিভার টিস্যু পরীক্ষা: লিভার থেকে টিস্যুর নমুনা অপসারণের বায়োপসি (liver biopsy) করা হয়। এতে প্রদাহ এবং দাগের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

লক্ষণ (symptoms of fatty liver): প্রাথমিক অবস্থায় কোন লক্ষণ বা উপসর্গ সৃষ্টি না করলেও পরবর্তীতে নিম্নোক্ত লক্ষণসমূহ দেখা দিতে পারে:
1. ক্লান্তি বা খুব দুর্বলতা বোধ করা (feeling fatigue)
2. উপরের ডানদিকের পেটে ব্যথা
3. পেটের উপরের ডানদিকে পূর্ণতা অনুভব (sense of fullness) করা
4. বমি বমি ভাব (nausea), ক্ষুধামন্দা (loss of appetite)
5. ওজন হ্রাস (weight loss)
6. হলদেটে পেট এবং পা (edema)
7. মানসিক বিভ্রান্তি (mental confusion)

চিকিৎসা (Treatment of fatty liver):
অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে ফ্যাটি লিভারের কোনো মানসম্মত ও কার্যকরী চিকিৎসা নেই। ডাক্তাররা সাধারণত লিভারের রোগে অবদান রাখে এমন ঝুঁকির কারণগুলির চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি রোগী স্থূলদেহী হয় তবে ডাক্তার খাদ্য, ব্যায়াম এবং কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওজন কমাতে পরামর্শ দেন। ডাক্তার হেপাটাইটিস- এ এবং হেপাটাইটিস -বি এর মোকাবিলায় অগ্রিম টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। ভ্যাকসিন লিভারের ক্ষতি করতে পারে - এমন ভাইরাসগুলিকে রক্ষা করতে সহায়তা করে বলে তারা মনে করেন।

হোমিওপ্যাথিতে ফ্যাটি লিভারের রোগীদের সফল চিকিৎসা দানের অনেক সুযোগ রয়েছে। ”ফ্যাটি লিভার” কোন রোগীর প্রধান অভিযোগ (chief complaint) হতে পারে। তবে হোমিওপ্যাথ রোগীর সমস্ত লক্ষণ বিবেচনা করেন। রোগীর সামগ্রিক লক্ষণ সংগ্রহ করবেন এবং রোগীকে স্বতন্ত্র চিকিৎসা দিবেন। ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত সকল রোগীর জন্য কখনও একই চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে সম্ভব না। ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথির মাধ্যমে ফ্যাটি লিভারের সফল চিকিৎসা করা সম্ভব। মনে রাখা কর্তব্য, একই সময়ে একাধিক ওষুধ রোগীকে কখনও নিরাময় করে না। কেন্ট রেপার্টরীতে ফ্যাটি লিভারের ১০টি ওষুধ দেখা যায়। কিন্তু রোগীর লক্ষণ সাদৃশ্যে এর বাইরের যে কোন ওষুধও নির্বাচিত হতে পারে।

চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীর জন্য নিম্নলিখিত পরামর্শগুলি সুপারিশ করা হয়:
1. স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ (healthy diet): এই খাদ্যের মধ্যে স্বাস্থ্যকর উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যা ফল, সবজি, গোটা শস্য (whole food) এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি (healthy fats) সমৃদ্ধ। রোগীর জীবনধারা ডায়েট পরিকল্পনা করার সময় বিবেচনা করা উচিত।
2. স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা (maintaining healthy weight): রোগীর ওজন বেশি বা স্থূল হলে, প্রতিদিন ক্যালোরি গ্রহণ কমানো এবং অধিক শরীরিক পরিশ্রম তাকে সাহায্য করবে। যদি রোগীর স্বাস্থ্যকর ও স্বাভাবিক ওজনও থাকে, তবুও তাকে স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। মোটকথা, একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুশীলন করে তা মেনে চলতে হবে। 
3. ভালো ঘুম (sound sleep): ফ্যাটি লিভার, হৃদরোগ, ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এর মতো জীবনযাত্রার রোগে (lifestyle diseases) আক্রান্ত রোগীকে দিনে ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করা উচিত। সুযোগ থাকলে দিনেও ১৫-৩০ মিনিট ঘুমিয়ে নিতে পারেন।
4. স্ট্রেস ম্যানেজ করা (managing stress): রোগীর যদি খুব বেশি মানসিক চাপ থাকে, তাহলে তাকে তা সঠিকভাবে ম্যানেজ করার কলাকৌশল শিখে তা কাজে লাগানো উচিত।

ঝুঁকির কারণ (causes of risk): সঠিক চিকিৎসা না করা হলে নিম্নোক্ত বিভিন্ন রোগ ও তার চিকিৎসার কারণে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়তে পারে:
1.	উচ্চ কোলেস্টেরল (High Cholesterol)
2.	রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের উচ্চ মাত্রা (High levels of triglycerides)
3.	মেটাবলিক সিন্ড্রোম (Metabolic syndrome)
4.	স্থূলতা (obesity)
5.	পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রম (PCOS)
6.	স্লিপ অ্যাপনিয়া (sleep apnea)
7.	টাইপ ডায়াবেটিস - ২ (Diabetes Miletus)
8.	আন্ডারঅ্যাক্টিভ থাইরয়েড বা হাইপোথাইরয়েডিজম (Hypothyroidism)
9.	আন্ডারঅ্যাক্টিভ পিটুইটারি গ্রন্থি বা হাইপোপিটুইটারিজম (Hypopituitarism)

ডা: বেনজীর বিশ্বখ্যাত হোমিওপ্যাথ প্রফেসর জর্জ ভিথোলকাসের নিকট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

By drbenojirbd

Dr. Benojir is Director at Bangladesh Public Administration Training Center. He is practicing Classing Homeopathy. He is trained by the world's best Homeopath Prof. George Vithoulkas and eminent Indian Homeopath Farokh J Master, MD, PhD. Dr. Benojir is practicing classical homeopathy since last 25 years. He consult patient in-person and online.

Need Help?

Discover more from Dr. Benojir

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading