হোমিও টিপস – ১২ : স্বাস্থ্যের সংরক্ষক হিসেবে হোমিওপ্যাথ…
অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির ন্যায় হোমিওপ্যাথ কেবল রোগীর চিকিৎসা দিয়েই ক্ষ্যান্ত হবেন না। কারণ, হোমিওপ্যাথির জনক মহাত্মা হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথকে স্বাস্থ্যের সংরক্ষকও বলেছেন। তিনিই স্বাস্থ্যের সংরক্ষক যিনি – কি কি কারণে মানবস্বাস্থ্য বিকৃত হয়ে রোগের সৃষ্টি হয় এবং তা কি কি উপায়ে তা দূর করে মানুষকে সুস্থ রাখা যায় তা জানেন ও সে অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেন।
এখানে কেবল রুগ্ন ব্যক্তিকে সুস্থ করে তোলার কথাই বলা হয়নি। বরং সুস্থ ব্যক্তির কথাও জোর দিয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমরা এ দায়িত্ব পালনে বহুলাংশে অক্ষম। বস্তুগত এ জগতে অধিকাংশ চিকিৎসকই চান তার ব্যবসায়িক সাফল্য উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাক। আর রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি মানেই চিকিৎসা পেশায় সাফল্য। আর আজ যিনি রোগী হিসেবে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন, তিনি যেন আজীবন একটির পর একটি রোগে ভুগতেই থাকেন তার সকল বন্দোবস্ত করতে ডাক্তার ব্যস্ত। বাস্তবতা আজ এ পর্যায়ে যে, অধিকাংশ চিকিৎসা পদ্ধতির ধারক-বাহকেরা মনে করেন যে, ”রোগী আরোগ্য লাভ করলেন তো ডাক্তার তার কাস্টমার হারালেন” (A patient cured is a customer lost). ইউরোপ-আমেরিকার মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদের প্রথম ক্লাসেই এ কথাটা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। কারণ, চিকিৎসা ব্যবস্থা বর্তমানে সেবার চেয়ে অধিক পরিণত হয়েছে ব্যবসায়। পৃথিবীব্যাপী ব্যাপকহারে ওষুধ কোম্পানী গড়ে উঠার ক্রমবর্ধমান ধারাই তার প্রমাণ। বহু দেশে আজ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শুন্যের কোঠায় পৌছালেও, রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। অধিক জনসংখ্যা, অধিক রোগী এ ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণিত করতে হবে।
অনেকের ধারণা এমন যে, রোগী অনুপাতে ডাক্তারের সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষের স্বাস্থ্যসেবা যত দোরগোড়ায় পৈৗঁছাবে মানুষ তত স্বাস্থ্যবান হবে। এ ধারণা একেবারে ভ্রান্ত। তখনি এ ভ্রান্ত ধারণা সত্য প্রমাণিত হবে যখন আমরা রুগ্ন ব্যক্তির চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির স্বাস্থ্য রক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিব। এখানে অবশ্যই প্রিভেনটিভ মেডিসিনের কথা বলা হচ্ছেনা। বরং ব্যাপকহারে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনা সৃষ্টির কথা বলা হচ্ছে। আমাদের উচিত যেন আমরা আমাদের চারপাশের মানুষগুলোকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলি। তাদের নীরোগ রাখতে সহায়তা করি। স্বাস্থ্য বিকৃত করে এমন বিষয়সমূহ পরিহার করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করি।
পশ্চিম ইউরোপের দেশ গ্রীস ১৯৬০ এর দশকে স্বাস্থ্যের সকল সূচকে এমনকি গড় আয়ুতেও পৃথিবীর শীর্যস্থানে ছিল। যখনি সেখানে গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো শুরু হয় তখন হতে মানুষ একটির পর একটি নতুন ও জটিল রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করে। পৃথিবীব্যাপী আজ একই চিত্র। ডাক্তার, ওষুধ, উন্নত চিকিৎসা, শল্য চিকিৎসার আধুনিক সরঞ্জাম – কিছুরই অভাব নেই অথচ রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকে দাবী করেন আগের যুগেও রোগ ছিল কিন্তু তা ডায়গনসিস হতো না। এ যুক্তি ভ্রান্ত। বরং এখন নতুন নতুন ও জটিল রোগের উৎপত্তির প্রধান কারণ ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া। সবাই রোগ সারাতে ব্যস্ত অথচ রোগীটিকে নিয়ে আদৌ কেউ ভাবছেন না। আর সুস্থ মানুষকে সুস্থ রাখতে আদৌ কারো কোন মাথাব্যথা নেই। বরং তাকে কিভাবে রুগ্ন করা যায় তারই পায়তারা চারদিকে।
মানুষকে পুষ্টিকর খাদ্য-পানীয় গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম, পরিমিত ঘুম এবং স্ট্রেস মোকাবিলায় করণীয় ইত্যাদি সম্পর্কে জানানো সকল চিকিৎসকের নৈতিক দায়িত্ব। তাতেই রোগীর হার কমবে। নিশ্চয়ই প্রতিটি চিকিৎসক শেষ বিচারের দিনে তার এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। আল্লাহ তার সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের সেবা করার জন্য সকল ডাক্তারকে তৌফিক দিন। আমীন।
ডাঃ বেনজীর। হোমিওপ্যাথ। এ্যাপায়েন্টমেন্ট গ্রহণ সহ যে কোন প্রয়োজনে ফোন দিনঃ ০১৭৩৩৭৯৭২৫২। আরো জানতে ভিজিট করুনঃ drbenojir.com/contact/
- লিখেছেন ডা. বেনজীর
- আপডেট : মার্চ ২০, ২০১৯
- 0 মন্তব্য
0 মন্তব্য