হোমিও টিপস – ১৪: কেন একই জাতীয় রোগীর ভিন্ন চিকিৎসা?
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য অর্থ একই জাতীয় রোগীর মধ্যে যার যার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা যার মাধ্যমে এক রোগীকে অন্যদের থেকে পৃথক বা স্বতন্ত্র্য হিসেবে বিবেচনা করা যায়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচরাচর দেখা যায় আমাদের ডাক্তাররা রোগীর মুখে তার রোগের বর্ণনা শোনার চেয়ে রোগীর টেস্ট রিপোর্ট দেখতে অধিক মনোযোগ দেন এবং রিপোর্ট দেখেই অধিক চিন্তিত হন। মানবসত্ত্বা বিভিন্ন অংগ্র প্রত্যংগ, মন এবং আবেগের একটি সমন্বিত ব্যবস্থা যা একে অপরের সাথে সমন্বয় করে মানবের যাবতীয় কার্যাদি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে থাকে। মানবের এক অংগের রোগ অন্যান্য অংগ প্রত্যংগ এমন কি মন ও আবেগকেও প্রভাবিত করে। রোগীর একাধিক উপসর্গের জন্য অনেকগুলি ওষুধের ব্যবহার এড়াতে এবং একক কার্যকর ওষুধ নির্বাচন করতে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের অনুসন্ধান তাই অপরিহার্য। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় কোন রোগীর শরীরেই একই সাথে একাধিক ওষুধের মিথষ্ক্রিয়ার দরকার বা সুযোগই কোনটিই নেই। বরং একক ওষুধই ফলপ্রসু। এক বিশেষজ্ঞ হতে আরেক বিশেষজ্ঞের নিকট দৌড়ানোর কোন দরকার নেই। যদি প্রতিটি লক্ষণ পৃথকভাবে পৃথক ওষুধে আরোগ্য করার চেষ্টা করা হয় তবে তার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া তথা জটিলতা ভয়াবহ। এর ফলে অনারোগ্য রোগের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে হোমিওপ্যাথ রোগীর ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের সন্ধান করেন কার্যকর একক ওষুধটি খোঁজার জন্য যা সকল লক্ষণাবলী যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে ও কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যতীত রোগীকে আরোগ্য করে। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের কিছু উদাহরণ দেয়া যাক: (১) জ্বরের ২ টি রোগীর একজনের জ্বরের সাথে মাথা ব্যথা, অন্য জনের নাকে সর্দি সহ চোখের চুলকানোভাব। (২) ২ জন এ্যাজমা বা হাঁপানীর রোগীর একজনের শ্বাসকস্টের আক্রমণ হয় শীতে, আরেক জনের গ্রীষ্মকালে। (৩) আবার ধরুন- ডায়বেটিসে আক্রান্ত ২ জন রোগীর একজন মিষ্টি অত্যন্ত পছন্দ করে, অন্যজনের মিষ্টিতে খুবই অনীহা। (৪) জ্বরের সময় কিছু রোগীর সারা শরীরে তাপ দেখা যায়, আবার কিছু রোগীর কেবল মাথা গরম অন্যান্য অংগ প্রত্যঙ্গ ঠান্ডা পাওয়া যায়। (৫) মহিলাদের অতিরজঃস্রাবে কারো কারো স্রাব হয় কেবল রাতে, কারো বা কেবল দিনে হয়। (৬) কিছু মানুষ কেবল সকাল বেলা রোগে ভোগে, কেউ বা কেবল রাতের বেলা।
লক্ষণ ও উপর্গের এই সকল পার্থক্য রোগীর ভিতরকার অন্তর্নিহিত প্যাথলজি ও রোগের কারণ সম্পর্কে হোমিওপ্যাথকে ধারণা দেয়। শুধু এই সকল বিষয় পর্যবেক্ষণ করে হোমিওপ্যাথ ডায়গনস্টিক টেস্ট ছাড়াই রোগীর সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন। যদি ব্যাক্টেরিয়াই রোগের কারণ হয় তাহলে কি করে একই জাতীয় স্ট্রেপ্টোকোক্কাস ব্যাক্টেরিয়া গলা, হৃদপিন্ড, অস্থি-সন্ধি, রিউমেটিক হার্ট ডিজিজ, রিউম্যাটিক আথ্রাইটিসের মত প্রতিটি ব্যক্তির বিভিন্ন অঙ্গকে প্রভাবিত বা আক্রান্ত করে? বরং এইজাতীয় লক্ষণগুলি রোগীর শরীরের দুর্বল দিকগুলি চিহ্নিত করে এবং অন্তর্নিহিত প্যাথলজি সম্পর্কেও আমাদের ধারণা দেয়। এর মাধ্যমেই আমরা রোগীর সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের বা স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাই। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য নির্ণয়ের জন্য প্রতিটি লক্ষণের হ্রাস-বৃদ্ধি ধরণ ও আনুষংগিক লক্ষণাবলীর সন্ধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগীদের প্রধান রোগ দিয়ে কেবল তাদের মধ্যে সাধারণীকরণ করা সম্ভব; ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য নির্ণয় বা পৃথকীকরণ সম্ভব নয়। অথচ সফল চিকিৎসা দিতে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য অপরিহার্য।
যখন লক্ষণ ও উপসর্গগুলি পরিষ্কারভাবে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমাদের নিকট সহায়তা চাইছে তখন কেন তাদের অবহেলা করে আমরা টেস্ট রিপোর্টের প্রতি মনোযোগী হই? হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা মানবসত্ত্বায় এক ধরণের স্বাচ্ছন্দ্য প্রতিষ্ঠা করে ফলে মানুষটি আগের চেয়ে স্বাস্থ্যবান হয়। অন্য কোন চিকিৎসার এরূপে স্বাস্থ্যে প্রত্যাবর্তন দেখা যায়না। বরং একটি রোগ দমনের পর রোগীর শরীর-মনে নতুন উপসর্গ দেখা দেয়।
ডাঃ বেনজীর। হোমিওপ্যাথ। এ্যাপায়েন্টমেন্ট গ্রহণ সহ যে কোন প্রয়োজনে ফোন দিনঃ ০১৭৩৩৭৯৭২৫২। আরো জানতে ভিজিট করুনঃ drbenojir.com/contact/
- লিখেছেন ডা. বেনজীর
- আপডেট : এপ্রিল ৮, ২০১৯
- 0 মন্তব্য
0 মন্তব্য