হোমিও টিপস – ২০: রোগীর উদাসীন্যতা, অনিচ্ছা, অনাসক্তি, অনীহা, উপেক্ষা, অমনোযোগিতা…
হোমিওপ্যাথিক রেপার্টরীতে একটি শব্দ আছে যাকে ”Indifference, apathy…” বলা হয় যা একটি মানসিক অবস্থা। এর অর্থ উদাসীন্যতা, নিরপেক্ষতা, অনিচ্ছা, অনাসক্তি, অনীহা, উপেক্ষা, অমনোযোগিতা ইত্যাদি। রোগীর মূল রোগ যাই হোকনা কেন বা যে রোগের চিকিৎসা জন্য তিনি আসুন না কেন, তার সাথে আনুষংগিক এই লক্ষণ থাকলে তা যথাযথ বিবেচনা ও বিশ্লেষণের দাবীদার। নাহলে রোগী আরোগ্য হবেন না। আজকের লেখায় দেখবো এই লক্ষণের কত ধরণ হয়।
উদাসীনতা একটি চমৎকার ও বিশেষ মানসিক অবস্থা বা লক্ষণ যখন। কোন কোন মানুষের নির্দিষ্ট সময়ে যেমন- ভোরবেলা, পূর্বাহ্ন বা অপরাহ্নের সুনির্দিষ্ট সময়ে, বিকেল, সন্ধ্যায় কিছু ভাল লাগেনা। কারো বা ঠান্ডা লাগলে বা মুক্ত বাতাসে অনীহা। অনেক রোগীর খাবার গ্রহণের পর এমন অবস্থা দেখা দেয়। কিছু লোকের মানুষের সংগে থাকলে উদাসীন লাগে। কারো বা জ্বরের সময় বিশেষত: ইনফ্লুয়েঞ্জার পর উদাসীনতার আবির্ভাব হয়।
অনেক সময় উদাসীনতার সাথে পর্যায়ক্রমে অন্য লক্ষণ দেখা যায় যেমন- দু:শ্চিন্তা, অস্থিরতা, প্রফুল্লতা, বিরক্তি বা রোষপ্রবণতা, ক্রন্দনশীলতা ইত্যাদি। উদাসীনতার ধরণ অনেক সময় এমন যে কোন কাজকর্মই ভাল লাগেনা রোগীর। এমনকি কারো আদর সোহাগও ভাল লাগেনা।
অনেক রোগী এমন যে, সে কখনও কোন বিষয়ে অভিযোগ/অনুযোগ তো দুরের কথা এমনকি প্রশ্ন করেও তার অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানা যায়না। কোন কোন রোগী এতটাই উদাসীন যে, সে তার বিবেকের আহ্বানেও সাড়া দেয়না। সবকিছুই রোগীর নিকট মৃতবৎ মনে হয়। রোগীর কোন ইচ্ছাশক্তি বা কোন কাজ করার আকাংখাও থাকেনা। কিছু লোকের বিষাদ বা তীব্র শোকের পর উদাসীনতা দেখা দেয়।
অনেক রোগীর কোনকিছুই ভাললাগেনা অর্থাৎ তারা সকল বিষয়েই উদাসীন। অনেক রোগী আছেন যারা একসময় যাদেরকে ভালবাসতেন সেই সকল বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের প্রতি এখন চরম উপেক্ষা বা অনীহা প্রকাশ করেন। কিছু মানুষ উদাসীনতার কারণে নিজেকে লজ্জাহীনতার সাথে উপস্থাপন করে, যারা পোষাক-আশাক বা ব্যবহারে উদাসীন। কিছু মানুষ বাহ্যিক বিষয়ে উদাসীন। কেউবা গুরুত্বপূর্ণ কোন বস্তুর প্রতি মারাত্মক উদাসীন। এমন মানুষ আছেন তাদের যা কিছু পছন্দ নয় তার প্রতি মারাত্মক উদাসীন। কিছু মানুষ উদাসীনতা সহ চোখ বন্ধ করে রাখেন। কারো বা মানসিক শ্রমের পর উদাসীনতা দেখা দেয়। কেউ কেউ একসময় যে সংগীত সে খুব পছন্দ করতেন তাতে চরম বিরক্তি। কিছু মানুষের দীর্ঘদিন হস্তমৈথুনের পর চরম উদাসীনতা দেখা দেয়। অনেকের বিপরীত লিংগের প্রতি উদাসীনতা আছে। ঘর্ম নি:সরনকালীন উদাসীনতা একটি বিশেষ লক্ষণ।
নিজের চেহারার প্রতি কেউ এতটা উদাসীন যে, সে ময়লা-ছেড়া পোশাকও পরে। তাকে কেমন দেখায় তাতে সে একদম চিন্তিত বা বিচলিত নয়। সর্বদাই অপরিচ্ছন্ন। চর্ম দেখে মনে হয় কতদিন না জানি গোসল করেনি। এতটাই নোংরা ত্বক।
কোন প্রকার আনন্দ-অভিলাষ বা বিনোদনের প্রতি অনেকে উদাসীন। অনেক রোগী থাকেন যারা আরোগ্য হবেন কি হবেন না সে বিষয়েও উদাসীন। কেউ সন্তানদের বিষয়ে উদাসীন কেউ বা ধর্মে উদাসীন।
এমন অনেকে আছেন যাদের কঠোরভাবে তিরষ্কার করা হলে বা তাদের প্রতি যতই তর্জন গর্জন করা হোক না কেন তাদের উদাসীনতার অবসান হয়না। কিছু মানুষের সমাজের প্রতি চরম উদাসীনতা আবার কারো বা সমাজবদ্ধ হয়ে চলতে পারলে উদাসীনতা হ্রাস পায়।
কিছু মানুষ শাস্তি-যন্ত্রণা, রোগভোগ ইত্যাদির প্রতিও উদাসীন। অনেক রোগী আছেন যারা মারাত্মক অসুস্থ হলেও নিজেকে সুস্থ বলে দাবী করেন এবং চিকিৎসা নিতে বা ওষুধ সেবনে অনীহা প্রকাশ করেন। যখন তিনি গুরুতর অসুস্থ থাকেন তখনও তিনি নিজেকে সুস্থ বলে দাবী করেন। অন্যের কল্যাণের করার বিষয়েও অনেকে উদাসীন।
বলুন তো কোন্ মেশিনে এ সকল লক্ষণের সন্ধান পাওয়া যাবে? কেবল রোগীর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারলে বা রোগীকে সঠিক পর্যবেক্ষণই এজাতীয় লক্ষণ জানার উপায়। আর এ লক্ষণের ভিত্তিতেই চমৎকার আরোগ্য সাধিত হতে পারে; রোগের নাম যাই হোক, যত জটিল হোক।
ডাঃ বেনজীর। হোমিওপ্যাথ। বিশ্বাখ্যাত হোমিওপ্যাথ প্রফেসর জর্জ ভিথোলকাস ও শীর্ষ ভারতীয় হোমিওপ্যাথ ফারুক জে মাস্টারের নিকট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এ্যাপায়েন্টমেন্ট গ্রহণ সহ যে কোন প্রয়োজনে ফোন দিনঃ ০১৭৩৩৭৯৭২৫২। আরো জানতে ভিজিট করুনঃ drbenojir.com/contact/
- লিখেছেন ডা. বেনজীর
- আপডেট : জুলাই ১১, ২০১৯
- 0 মন্তব্য
0 মন্তব্য