হোমিও টিপস- ২২: হোমিওপ্যাথিতে ডিপ্রেশনের ওষুধ ২৭৭ টি। কিন্তু সব বিবেচনায় ওষুধ দিতে হবে মাত্র ১টা
বিষণ্নতা, বিষাদ, হতোদ্যম, মনমরা, নিরানন্দ, অপ্রসন্নতা, স্ফূর্তি-শূন্যতা, দু:খময়তা, বিমর্ষতা মূলত: সমার্থক মানসিক অবস্থা। সবগুলিকে Depression বলা যায়। জীবনে চাওয়ার সাথে পাওয়ার মিল না হলে মানুষ বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন। হোক সে চাওয়া শারীরিক-মানসিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক, প্রেম-ভালবাসা-দাম্পত্য বা অন্য কোন ক্ষেত্রে। আজকের লেখায় বিষণ্নতার খুঁটিনাটি ব্যবচ্ছেদ করা হবে। হোমিও চিকিৎসা দিতে কেবল Depression শব্দটি যথেষ্ট না; সুনির্দিষ্টভাবে এর অনেক কিছু জানতে হবে।
বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়া বা উপশমের ক্ষেত্রে ”সময়” একটা ফ্যাক্টর। কারো দিনের বেলা, ভোরবেলা মনখারাপ থাকে, আবার অনেকের ভোরে ঘুম হতে উঠলে উপশম, কেউ ভোরবেলা বিষাদে ভোগেন অথচ সন্ধ্যায় ফূর্তিতে থাকেন। সকালে ঘুম ভাংগার পর অনেকে বিষাদে আক্রান্ত হন যা সকাল ৯টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। কারো ক্ষেত্রে দুপুর বেলা বিষাদ; সন্ধ্যায় দু:খবোধ বা ঠিক এর উল্টোটা। কারো বা বিকেল বেলা বিষাদ বা বিকালেই বিষাদের উপশম। কারো সন্ধ্যায় বিষাদ বা সন্ধ্যায় উপশম, সন্ধ্যায় বিছানায় গেলে বিমর্ষ, গোধূলি লগ্নেও কাউকে বিমর্ষ দেখা দেয়। রাতে কেউ বিষাদগ্রস্থ বা আনন্দিত, দিনরাত কান্নাকাটিসহ মনমরাভাব। কারো বা সকালে ডায়রিয়া শুরু হলেই বিষণ্নতা দেখা দেয়। কেউ রাতে বিছানায় গেলেই বিষণ্ন, কেউ মধ্যরাত্রির পর বা মধ্যরাত্রিতে বিষণ্ন। কারো বিষাদ নির্দিষ্ট সময় অন্তর যেমন- প্রতি ১৪ দিন পর পর দেখা দেয়। খুঁটিনাটি বিষয়কে গুরুত্বপূ্র্ণ মনে করে বিষাদাক্রান্ত হন অনেকে।
মুক্ত বাতাসে বিচরণ করলে কেউ বিষণ্ন হন কারো। কারো বা মুক্ত বাতাসে বিষণ্নতার উপশম। কেউবা গরম কক্ষে বিষণ্ন। গুমোট অর্থাৎ গরম ও অপ্রশস্ত আবহাওয়ায় (sultry weather) অনেকে মনমরা থাকেন। কারো বা সূর্যালোকে বিষণ্নতার সৃষ্টি হয় বা সূর্যালোকেই বিষণ্নতার উপশম হয়। বজ্রবিদ্যুতপূর্ণ ঝড়বৃষ্টিতে কারো বিষাদের উপশম হয়। শৈত্য প্রবাহের সময়, মেঘলা আবহাওয়ায়, ঠান্ডা শুরু হওয়ার সময়, গীষ্মকালে বা গরম আবহাওয়ায় অনেকে বিষন্ন হন।
নৈশভোজের পর কেউ বিমর্ষ হন বা নৈশভোজের পর কারো উপশম হয়। খাবারে কোন প্রকারে দোষ বা খাবারের তারতম্যে কেউ বিষণ্নতায় ভুগে থাকেন। খাওয়ার আগে-সময়ে বা পরে কারো বিষণ্নতা দেখা দেয় বা তার উপশম হয়।
প্রস্রাব করার পর কারো বিষণ্নতার উপশম হয়। দৃষ্টিশক্তির দূর্বলতাজনিত বা ঝাঁপসা দৃষ্টির কারণে কেউ বিষণ্নতায় ভোগেন। কারো বা হাঁটাচলার সময় বিমর্ষতার অবসান হয়। কেউ বা বিমর্ষতা হতে রেহাই পেতে চুপচাপ বসে থাকতে বাধ্য হন। একা থাকলেই অনেকেই বিষাদগ্রস্থ হন, এজন্য ব্যাকুল হয়ে সাথে কারো সংগ কামনা করেন।
বিষাদের সাথে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে যেমন: প্রফুল্লতা বা উল্লাস, ডায়রিয়া, স্ফূর্তি বা উল্লাসপূর্ণ হৈ চৈ (hilarity), উদাসীনতা বা অনাসক্তি, শারীরিক শক্তি সহ বিরক্তি বা রাগ, যৌন উত্তেজনা, কোন কিছুতে প্রবল আগ্রহ (vehemence) ইত্যাদি।
রাগ এবং বিরক্তির পর কেউ বিষণ্নতায় ভোগেন, কেউবা দু:সংবাদ শোনার পর, কারো ব্যবসায়িক ক্ষতির পর। অভিযোগ করলে কারো বিষণ্নতার উপশম হয়। কারো সাত্বনাদানে বৃদ্ধি, কারো কাশির পর বৃদ্ধি, অন্ধকারে কারো বিষাদ দেখা দেয় যে কারণে আলোতে থাকতে চায়। ডায়রিয়া চাপা পড়ে বা পর্যায়ক্রমে বিষণ্নতা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন কেউ। কেউ বা একদম বিনা কারণে বিষণ্নতায় ভোগেন। শিশুদের ভেতরও বিষণ্নতা দেখা যায়; বিশেষ করে যাদের বাবা-মা দাম্পত্য কলহে লিপ্ত বা যাদের বাবা-মায়ের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেছে। প্রিয়জনকে হারালেও মানুষ বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন। আবেগশূন্য অবস্থায় কেউবা শুন্যদৃষ্টিতে একদিকে তাকিয়ে থাকেন, কোন কাজ না করেই কক্ষে একা একা বসে থাকেন।
আত্ম সংযম-ইন্দ্রিয়সংযম বা কৌমার্য অবলম্বনের ফলে (continence) অনেকে স্ফূর্তিশূণ্যতায় ভোগেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে এমন রোগীনি পরবর্তীতে জরায়ু, স্তনের টিউমার বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। অতিরিক্ত ও অবাধ যৌনাচারের পরও কেউ কেউ বিষণ্নতায় ভোগেন।
কিছু বালিকা বয়:সন্ধিকালের পূর্বে বিষণ্নতায় ভোগেন। মাসিক ঋতুস্রাবের পূর্বে, সময়ে বা পরে, ঋতুস্রাব কোন কারণে চাপা পড়লে বা কোন কারণে ঋতুস্রাব দমন করা হলে অনেকের বিষণ্নতা দেখা দেয়। অবশ্য স্বাভাবিক ঋতুস্রাব চলাকালীন বিষণ্নতার উপশমও লক্ষণীয়। অনেকে প্রথম ঋতুস্রাব (Menarche) শুরু হলে বিমর্ষ বোধ করেন। ঋতুজরা বা রজোবন্ধকালীন (menopause) অনেক নারীকে বিমর্ষ থাকতে দেখা যায়। গর্ভধারণকালীন অনেক নারী বিষাদে আক্রান্ত হন। সন্তান প্রসবের পর অর্থাৎ আতুড়ঘরে অনেকে নিরানন্দ জীবন কাটান। রোগীকে সেবাদানকারী নারী, এমনকি বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করান এমন নারীও বিষাদে আক্রান্ত হতে পারেন এক পর্যায়ে।
কেউ বা শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্ত নি:সরণ হলে বা অতিরিক্ত ধাতুক্ষয় হলে বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন। স্বপ্নদোষ বা অন্যকোন ভাবে অতিরিক্ত বীর্যপাত অনেকের বিষাদের কারণ। দীর্ঘদিন ধরে হস্তমৈথুন করা অনেকের বিমর্ষতার কারণ। পুরুষত্বহীনতায় আক্রান্ত হয়ে অনেকে ডিপ্রেশনে ভোগেন। যৌনাকাংখা অবদমনের ফলে অনেকে বিষাদে আক্রান্ত হন।
শারীরিক পরিশ্রমের পর অনেকে বিষাদে আক্রান্ত হন। অনেকের বিষাদের উপশম হয় শারীরিক পরিশ্রম করলে। কারো বা শুয়ে থাকলে বিষাদের উপশম বা অবসান ঘটে। ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে তা চিন্তা করে অনেকে বিষণ্ন হয়ে পড়েন। এমন কিছু মানুষ আছেন যাদের বিষণ্নতার উপশম হয় অন্যকে বিষণ্নতায় আক্রান্ত দেখলে। এরা অন্যকে বিমর্ষ দেখলেই প্রশান্তি লাভ করেন। এক প্রকার পরশ্রীকাতরতা (envy) বা ঈর্ষা (jealousy) হতে তাদের এ ভাললাগা বোধ কাজ করে।
মাথাব্যথাকালীন বিষন্নতায় ভোগেন কেউ কেউ। কোন আঘাত পাওয়ার পর বিশেষত: মাথায় আঘাত পাওয়ার পর বিষন্নতা দেখা যায়। অনেকের মাথায় আঘাত পাওয়ার পর স্মৃতি বিভ্রাটসহ অন্যান্য মানসিক লক্ষণ দেখা দেয়। রোগীর নিকট দুর্ভাগ্যজনক এমন কোন আকস্মিক দুর্ঘটনা, নিদারূণ দুর্দশা, দৈবদুর্বিপাকের, দীর্ঘদিন রোগভোগের পর অনেকে ডিপ্রেশনে ভোগেন।
অপমানিত হয়ে বিমর্ষ হয়ে পড়েন কেউ কেউ। চুলকানোর পর বিমর্ষ হন কেউ। মার্কারী বা পারদের অপব্যবহারের পর বহু মানুষ বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন। কিছু মানুষ শব্দের প্রতি এতটা সংবেদনশীল যে তারা বিমর্ষতায় ভোগেন।
কেউ সংগীত শুনলে বিমর্ষ হন। কারো বা বিষাদের উপশম সংগীত শ্রবণে; বিশেষত: বিরহের গান শ্রবণে। সংগীতের প্রতি অনেকেই সংবেদনশীল। সংগীত অনেকের কষ্ট বাড়িয়ে দেয়, অনেকে গান শুনে কান্নাকাটি করে হাল্কা হন।
ঘর্মাক্ত হওয়ার সময়ে অনেকে বিমর্ষ হন। অনেকে বুকের উপর এক ধরণের চাপবোধের ফলে বিষাদে আক্রান্ত হন। অনেকে যে কি কারণে বিষাদে আক্রান্ত তা বোঝাই যায়না। সকল দু:খবোধকে তারা গোপনে চেপে রাখার চেষ্টা করেন; একেবারে যেন শান্তিপূর্ণ, নিরব, নি:শব্দ। কেউ অনেক বিষাদগ্রস্থ অথচ কাঁদতে পারেন না। কাঁদলে অনেকের বিষাদ প্রশমিত হয়। বিষাদের মাত্রা অনেকের এমন যে আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা যায় অনেকের ভেতর।
শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘ্ন ঘটলে বা এ্যাজমা রোগীর এক ধরণের বিষাদ দেখা যায়। বিষাদে আক্রান্ত অনেকেই দীর্ঘশ্বাস (sigh) ফেলেন। নিদ্রাহীনতাসহ বিষাদ বা বিষাদের কারণে নিদ্রাহীনতা দেখা যায় অনেকের। অযাচিত বা অনুচিতভাবে বা অসংগতভাবে (undeserved) কোন ঘটনা ঘটার ফলেও বিমর্ষ হন অনেকে। সমাজিক ক্রিয়াকলাপের কারণে অনেকে বিষাদে আক্রান্ত হন; অনেকের বিষাদের উপশমও হয়ে থাকে সামাজিক মিথষ্ক্রিয়ার ফলে। দু:খের গল্প শুনলে বিষাদে আক্রান্ত হন।
প্রেমে হতাশ বা ব্যর্থপ্রেমের শিকার বা দাম্পত্য কলহের কারণে বহু মানুষ নিরানন্দ জীবনযাপন করে। এ কারণে অনেকের মনে ঈর্ষা, ক্রোধ দেখা দেয়। কেউ বা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। অনেকে নি:শব্দে দু:খবরণ করে নেন, তাদের সকল কষ্ট অনুচ্চারিত থেকে যায়।
Dr. Benojir is a Homeopathy, trained by world’s best homeopath Prof. George Vithoulkas and Farokh J Master. Cell: 01733797252, for more info please visit: drbenojir.com/contact/
- লিখেছেন ডা. বেনজীর
- আপডেট : জুলাই ১৭, ২০১৯
- 0 মন্তব্য
0 মন্তব্য