হোমিও টিপস-৩০ঃ চিকিৎসায় আসল-ভেজাল! প্যাকেজ!! গ্যারান্টি!!!মূল্যফেরত!!!!
[Dr. Benojir, From United Kingdom]
চিকিৎসক হিসেবে এযাবত কত শত শত বিচিত্র রোগীই না দেখেছি। একেক রোগীর একেক আচরণ? অনেক ঘটনা আজ মনে পড়ছে। প্রথম দিকে একটি ২০ বছর বয়সী ছেলেকে চিকিৎসা দিলাম। তখন আমি ১০০ এমএল শিশিতে ৭৫ মিলি পানি দিয়ে ওষুধ দিতাম। ১ বা ২ চামচ করে রোজ ১ বা ২ বার সেবনের পরামর্শ দিতাম। আমার এই রোগীটি ২/৩ বার খেয়ে সুস্থ হয়ে যায়। তো তারপর? সে বোতল সহ চেম্বারে হাজির। সে বাকী ওষুধ ফেরত নিয়ে টাকা ফেরত দিতে বলে। কারণ, বাকী ওষুধ খাওয়ার আর দরকার নেই তার। সে চিকিৎসার ফল হাতে নাতে পেয়েছে!!
২৪ ঘন্টা বয়সী একটি নবজাতকের চিকিৎসার ভার পেলাম। জন্ম হতেই একটানা সে কেঁদে যাচ্ছিল। খাওয়া-ঘুম কিছুই নাই। ঢাকা শিশু হাসপাতাল হতে এ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়েছে। রওয়ানা হওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। শিশুটির বাবা কেবল তার শাশুড়ির অনুরোধ রাখতে আমার শরণাপন্ন হন। উল্লেখ্য, শিশুটি জন্মের পর হতে প্রস্রাব করেনি। স্টাডি করে বোতলে ২/১ ফোটা ওষুধ দিয়ে একটা ড্রপার দিলাম। ১৫/২০ মিনিট অন্তর ৪/৫ ফোটা করে খাওয়াতে বললাম। বলে দিলাম কান্না বন্ধ হলে বা প্রস্রাব বা পায়খানা হলে ওষুধ বন্ধ করবেন। শিশুটিকে ২য় ডোজটিও দিতে হয়নি। ১ম ডোজ খাওয়ানোর ৮/৯ মিনিটের মাথায় সে প্রস্রাব করে। মায়ের দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। হোমিওপ্যাথি নাকি স্লো!!
একবার এক ৯/১০ বছর বয়সী বাচ্চাকে আনা হলো পাঁজাকোলা করে। স্পর্শ করতেই ভয় পেলাম। সন্দেহ হলো সে মারা গেছে কিনা। শ্বাসকষ্টের রোগী। শরীর বরফের মত শীতল, যেন মৃতদেহ। বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে চেম্বারেই ওকে একডোজ ওষুধ খাইয়ে দিলাম। ১০/১৫ মিনিটের মাথায় বাচ্চাটি ছোট ভাইয়ের সাথে আনা ফুটবল খেলতে খেলতে বাসায় ফিরলো। ১ বছর ফলোআপে ছিল বাচ্চাটি। শ্বাসকষ্ট আর ফেরেনি এর ভেতর। অথচ সে বহুদিন ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিল।
হোমিওপ্যাথি করতে যে প্রেরণা লাগে তা আমার ভেতর ছিল ছোটবেলা থেকেই। ছোট বেলায় দেখেছি আব্বার কাছে রোজ ভোরে ২/৪ জন রোগী আসতো। উনি বই পড়ে পড়ে ওষুধ দিতেন। রোগীর উপকারও হতো। শেষ প্রেরণা পেয়েছিলাম আমার নিজের চিকিৎসা হতে। ৮/৯ বছর আমি যে তথাকথিত ক্রণিক ডায়রিয়া (এখন ডাক্তাররা হয়তো আইবিএস বলবেন) এবং কোল্ড এ্যালার্জি তে ভুগলাম। সকল চিকিৎসা ব্যর্থ হলো। অথচ মাত্র দেড় মাসের হোমিও চিকিৎসায় তা সারলো। আবার ২০১৬ এ আমি যে শ্রবণশক্তি হারালাম। যেখানে দেশ-বিদেশের ৪ জন ইনএটি বিশেষজ্ঞ ব্যর্থ হলেন। আমার নিজের হোমিও চিকিৎসাতে সেখান থেকে মুক্তি পেলাম আলহামদুলিল্লাহ।
উপরের ঘটনাগুলো আমার সাফল্যগাঁথা। লেখার কারণ এই নয় যে এসব সফলতার কারণে আমার ভেতর কোন অহমিকা বা গর্ব জন্ম নিয়েছে। একদম তা নয়। বরং আমি এসব সাফল্যে আরও অনুপ্রাণিত হয়েছি, আমার বিনয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার জ্ঞানলিপ্সার কারণে জীবনের সর্বস্ব ব্যয়ে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল হোমিওপ্যাথ প্রফেসর জর্জ ভিথোলকাসের কাছে হোমিওপ্যাথি শিখেছি। তবুও শেখার আগ্রহ আমার দুর্বার, নিরন্তর!! মনে হয় অনেক কিছুই শেখার বাকী। কারণ, বুঝে গেছি হোমিওপ্যাথির চেয়ে ভাল কোন চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। কখনও যদি ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে এসেছি মনকে এ বলে প্রবোধ দিয়েছি ”এ আমার জ্ঞানের দৈন্যতা, হোমিওপ্যাথির দুর্বলতা কখনও নয়” অথবা ”আল্লাহ্ চাননা এ রোগী আমার হাতে নীরোগ হোক”। আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করেছি ”ওষুধ যাই হোক মানবশরীরে প্রবেশ করামাত্রই সে আল্লাহর অনুমতি চায় যে এই রোগীকে তা কিউর করবে কি করবে না।” আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষেই সে কিউর করে। বেকুপেরা না বুঝে বা প্রতরণা করে মানিব্যাগ গ্যারান্টি চালু করেছে!!
দুঃখ লাগে আমার কিছু তথাকথিত হোমিওপ্যাথ রোগীদের গ্যারান্টি দেন, নানারকম প্যাকেজ দেন, চিকিৎসার নানারকম কোর্স আবিষ্কার করেছেন। এরা রোগীর সাথে অধিক কথাবার্তা বলা পছন্দ করেন না। ২/১ কথা শুনেই ৫/১০/২০টা ওষুধের শিশি/বোতল, ভিটামিন, সিরাপ ধরিয়ে দেন। তাদের খরচও আমার চেয়ে ক্ষেত্র বিশেষ ২০ থেকে ৫০ গুণ। আশ্চর্য হই তাদের অনেক রোগী তাদের নিকট বার বার যেতে চায়না। তারাও দ্বিতীয়বার গেলে দুর্বব্যবহার করেন, বেজার হন। কারণ যা কামাবার তা প্রথম বারেই করে কামিয়ে নিয়েছেন। এদের কারো কারো নিজস্ব ল্যাবও আছে। প্রতিবার রোগী গেলেই একগাঁদা টেস্ট ধরিয়ে দেন। হোমিওপ্যাথও এখন গ্রুপ অব কোম্পানী চালায়! কিন্তু আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা রোগী ও তার আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলি,তার রোগের মুল কারণটা জানতে চাই। কারণ, আমাদের অভিজ্ঞতা এটাও দেখেছি রোগীর ১০০% নরমাল রিপোর্ট। অথচ রোগী মারাত্মক অসুস্থ। তার রিপোর্টে তার ভোগান্তির একটা কথাও লেখা হয়নি। হবে কি করে? রোগীর কষ্ট তার নিজের ভাষায় যেভাবে জানা যায় তা জানার কোন মেশিন আজও আবিষ্কার হয়নি, কখনও হবেওনা।
ঐ সকল তথাকথিত ডাক্তার নিজের পেশার প্রতি অন্যায় করছেন, করছেন হোমিওপ্যাথির বদনাম। তাদের কারণেই ইদানীং রোগীরা আমাদের কাছে আরোগ্যের গ্যারান্টি চান। না সারলে টাকা ফেরত দিব কিনা তা জানতে চান। তাদের শর্তে রাজী না হলে তারা কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলেন। ব্যাপক প্রচারে নামেন। সনদ আছে কিনা দেখাতে বলেন। ফেক ডক্টর, প্রতারক এসব কত কথাও শুনতে হয়।
আমি আমার চিকিৎসা জীবনে কখনও কাউকে গ্যারান্টি দেইনি। কারণ, বরাবরই মনে করেছি, আমার কাজ যথাসাধ্য চেষ্টা করে নিয়ম মেনে কেস নেয়া, গভীরভাবে স্টাডি করে চিকিৎসা দেয়া। আরোগ্য তো আল্লাহই করেন। এ কথাটা অনেকেই পছন্দ করেন না। আজ যদি আমি গ্যারান্টি দিয়ে চিকিৎসা করতাম, প্রতারণা করে নানা রকম ব্যয়বহুল প্যাকেজ/ কোর্স চালু করতাম, ১টা ওষুধ না দিয়ে ১০/২০ টা ওষুধ দিতাম তাহলে হয়তো এদের মত মানুষের চোখে বড় ডাক্তার হতাম। ডাক্তার কেন রোগীর কেস নেবার পর এত স্টাডি করবে এদের মাথাতেই আসেনা। মানুষ আসল-ভেজালও বুঝেনা!!
কারো বিরুপ মন্তব্যের জন্য নিশ্চয়ই আমি কখনও আমার নীতি-আদর্শ ও লক্ষ্য হতে পিছবা হবোনা। চিকিৎসা পেশাকে ব্রত হিসেবে নিয়েছি। একে ইবাদত মনে করি। তাই কখনও একে কলুষিত করবো না। সৃষ্টির সেবা নিশ্চয়ই ইবাদত। আমার হারাবার বা কম্প্রোমাইজ করার কিছুই নেই। আর আমার পুরষ্কার!! সে তো একমাত্র রাব্বুল আলামীনের কাছে। ইনশাল্লাহ্ নবীন প্রবীণ হোমিওপ্যাথ নীতি নৈতিকতা বিবর্জত হবেন না। এটা আমার একান্ত কামনা!!!
Dr. Benojir, কেবল জরুরী দরকারে ফোন (+444704865695) করুন। For more information please visit: drbenojir.com/contact/
- লিখেছেন ডা. বেনজীর
- আপডেট : মার্চ ১৮, ২০২০
- 0 মন্তব্য
0 মন্তব্য