
উদ্বেগ ও চাপ ব্যবস্থাপনায় হোমিওপ্যাথি:
আমরা এখন এক চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্যে বসবার করছি। বহু মানুষ স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক উদ্বিগ্ন (anxious) বোধ করছেন। মানসিক চাপ ও উদ্বেগের (stress & anxiety) মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাই সর্বোৎকৃষ্ট।
উদ্বেগ-চাপের পরিস্থিতি একটি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এটা আমাদের দেহের অন্তর্নিমিত (inbuilt) প্রক্রিয়াকে ট্রিগার করে যা আমাদের স্বাস্থ্যগত হুমকি হতে দূরে থাকতে সহায়তা করে এবং আমরা যখন মাত্রাতিরিক্ত স্ট্রেসের ভেতর দিয়ে যাই তখন পর্দার পিছনে কি ঘটছে তা বোঝার জন্য আমাদের সহায়তা করে।
আমরা যখন উদ্বিগ্ন হতে শুরু করি, তখন আমাদের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলি (adrenal glands) বিভিন্ন হরমোন নি:সরণ করে যাতে আমরা যে কোন মানসিক চাপের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকি। যখন প্রয়োজন হয় কর্টিসল (cortisol) আমাদের রক্ত প্রবাহে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংগগুলির চাহিদা পুরণ করে । একই সময়ে, এটি অন্যান্য কিছু শারীরিক ক্রিয়াকলাপকে ধীর করে দেয় যা লড়াই বা পলায়ন (fight or flight) পরিস্থিতিতে এতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। একদিকে অ্যাড্রেনালিন হৃদস্পন্দন (heart rate) বাড়ায়, আমাদের রক্তচাপ (blood pressure) বৃদ্ধি করে শক্তি বাড়ায়। অন্যদিকে সেখানেই সবচেয়ে অধিক অক্সিজেন সরবরাহ করে যেখানে এটি সবচেয়ে বেশী দরকার হয়। একসাথে এই হরমোনের সংমিশ্রণটি আমরা যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি তার সাথে মোকাবিলা করার সর্বোত্তম সুযোগ করে দেয়।
যদিও এই প্রক্রিয়া কিছু পরিস্থিতিতে জীবন রক্ষাকারী হতে পারে, তবুও এই অবস্থা খুব তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হলে তা আমাদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারি। বহুক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংগপ্রত্যংগের ক্রণিক রোগ দেখা দেয়। ব্যক্তি ভেদে লক্ষণের মধ্যে তারতম্য দেখা দিতে পারে। তবে সাধারণত, স্নায়বিক অনুভূতি (feeling nervous), অস্থির বা উত্তেজনা (restlessness or tense), কাঁপুনি (trembling), দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস (rapid breathing), বুক ধড়ফড়ানি (palpitation) ইত্যাদির দেখা যায়।
দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগের জন্য প্রচলিত চিকিৎসায় (conventional treatment) সাধারণত কাউন্সেলিং বা Cognitive Behavioral Therapy (CBT) এর মত একটি মনোস্তাত্ত্বিক থেরাপি দেয়া হয়ে থাকে যা রোগীকে তাদের অভিজ্ঞতাগুলি প্রক্রিয়া করতে এবং তাদের চাপ কমানোর ও মোকাবেলা করার উপায় খুঁজে পেত সাহায্য করে। কিছু ক্ষেত্রে, ওষুধ নির্ধারিত হতে পারে, তবে ওষুধ প্রায়শ:ই অবাঞ্ছিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ওষুধ নির্ভরতা তৈরি করে যা রোগীতে আরো উদ্বেগ নিয়ে আসে।
হোমিওপ্যাথি আমাদের উদ্বেগ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি হিসেবে অনেক সহায়তা করতে পারে।
এখানে বহু ওষুধের মধ্যে হতে কেবল ৩টি মুল ওষুধ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো যা কঠিন সময় অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। যদিও লক্ষণ সাদৃশ্যে যে কোন ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।
একোনাইট:
হঠাৎ তীব্র আতংক অনুভূত হলে এটি একটি কার্যকর প্রতিকার। এতে অনেক প্রকারের ভয় আছে, এমনকি রোগী মৃত্যুর ভয়ও ও পায় রোগী। কোন মানসিক / আবেগিক ট্রমা বা আঘাতের কারণে এমন হতে পারে। একোনাইটে বুক ধড়ফড়ানি, শ্বাসকষ্ট এবং মুখমন্তলে ফ্লাশ হতে পারে। প্রতিকারটি ফ্লুর প্রাথমিক পর্যায়েও কার্যকর। বিশেষ করে যখন ব্যথা, শীতলতা এবং উদ্বেগের ঢেউ থাকে। লক্ষণগুলি মধ্যরাতের পরে, প্রথমদিকে আরও বৃদ্ধি পায়।
আর্সেনিকাম এ্যালবাম:
ঠান্ডা ও অস্থিরতার সাথে উদ্বেগের জন্য আর্সেনিকাম একটি ভাল পছন্দ। রোগী ক্লান্ত হলেও অস্থির, গতিশীল এবং উদ্বিগ্নভাবে এক জায়গায় ঘুরতে থাকে। এই ওষুধ এমন ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত যারা শৃংখলা, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং যারা সবকিছুর উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ আছে এমন অনুভব করতে ভালবাসে। আসন্ন রোগের ভয় বা স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে চলমান উদ্বেগ থাকতে পারে। এর সাথে মানুষের সংগ পাওয়ার জন্য আকাংখা এবং অন্যের নিকট থেকে প্রচুর আশ্বাসবাণী শুনতে আগ্রহী থাকে। আর্সেনিক কাশিতেও সাহায্য করে যেখানে জ্বলন্ত সংবেদন, শ্বাসনালী সংকুচিত এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা সৃষ্টি করে। এছাড়া হজমের সমস্যা বা জ্বলন্ত ডায়রিয়াতে এর চমৎকার ব্যবহার রয়েছে।
জেলসেমিয়াম:
এটি উদ্বেগ ও আতংকের অন্যতম প্রধান প্রতিকার। এটাতে মারাত্মক দুর্বলতা, কম্পন এমনকি মাথাঘোরার অনুভূতিও আনুষঙ্গী হিসেবে থাকতে পারে। চরম ভয়ে ব্যক্তিটি প্রায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারে। কোন কিছু করতে অক্ষম এবং একটি কোণে লুকিয়ে থাকতে চায়। এ ওষুধটি ক্ল্যাসিক ফ্লুতে ব্যবহৃত হয়। এতে শরীর ভারী, অলসতার অনুভূতি, অংগ-প্রত্যংগে ব্যথা এবং তৃষ্ণাহীন জ্বর থাকবে। মাথাব্যথাও হতে পারে। সাথে কোন কিছুর প্রতি মনোনিবেশ (focus) করতে মানসিকভাবে সমস্যা হতে পারে।
For an individualized prescription and best results, please consult a professional homeopath.