বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) বন্ধ্যাত্বকে প্রজনন ব্যবস্থার (reproductive system) একটি রোগ বলে সংজ্ঞায়িত করেছে। ১২ মাস বা তার অধিককাল নিয়মিত ও অরক্ষিত সহবাসের (regular unprotected sexual intercourse) পরেও গর্ভধারণে ব্যর্থতা দেখা দিলে আমরা তাকে প্রাথমিক বন্ধ্যাত্ব (Primary infertility) বলতে পারি। সেকেন্ডারি বন্ধ্যাত্ব (secondary infertility) হল পূর্বে জীবিত সন্তান জন্মের পরে ও পরবর্তীকালে গর্ভধারণে ব্যর্থতা।

জনসংখ্যা ভিত্তিক গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায় যে, বিশ্বের ১০%-১৫% দম্পতি বন্ধ্যাত্বে ভোগেন। এদের মধ্যে ২০%-৩০% পুরুষ এবং ২০%-৩৫%মহিলা বন্ধ্যাত্বের শিকার। নির্দিষ্ট কোন প্যাথলজির কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। তবে কারণটি প্রায়শ:ই বহুমুখী (২৫%-৪০%)। ১০%-২০% দম্পতির উভয়ের সার্বিক ল্যাব রিপোর্ট স্বাভাবিক পাওয়া গেলেও অব্যক্ত কারণে তারা সন্তান জন্মদানে ব্যর্থ হন। মহিলাদের প্যাথলজিগুলির মধ্যে সাধারণত: ফ্যালোপিয়ান টিউবের কাঠামোগত বা কার্যগত সমস্যা (ovulatory dysfunction or structural problems in fallopian tube), ডিম্বস্ফোটনে ব্যর্থতা/অক্ষমতা (Ovulatory dysfunctions) বা ডিম্বানুর কাঠামোগত সমস্যা থাকতে পারে। এছাড়া ওভারিয়ান টিউমার (ovarian tumors), অল্প মাত্রায় ওভারিয়ান রিজার্ভ (poor ovarian reserve), কর্পাস লুটিয়াম অপ্রতুল্যতা (corpus luteum insufficiency) বা সিস্টেমিক মেটাবলিক (systemic metabolic)/ এন্ডোক্রাইন (endocrine) disorders, যেমন – পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (polycystic ovarian syndrome- PCOS), হাইপোথাইরয়েডিজম (hypothyroidism), হাইপারথাইরয়েডিজম (hyperthyroidism) এর কারণে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। প্রজনন কাঠামোগত সমস্যা  (Reproductive structural problems), পেলভিক প্রদাহজনিত রোগ (pelvic inflammatory diseases), এন্ড্রোমেট্রিওসিস (endometriosis), ফাইব্রয়েড (fibroids) বা জন্মগত সমস্যার কারণে (congenital problems) ও মহিলারা বন্ধ্যাত্বে ভুগতে পারেন। মহিলাদের ঋতুস্রাবে যে কোন গোলযোগ (menstural disorder) গর্ভধারণে বড় বাঁধা।

এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসায় মহিলাদের বন্ধ্যাত্বের যে সকল চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম: কৃত্রিম প্রজনন (Artificial insemination – AI), জরায়ুর সাহায্যে গর্ভধারণ (intrauterine insemination -IUI), ইন ভিট্রো ভার্টিলাইজেশন (In vitro fertilization (IVF), প্রাকৃতিক চক্র (Natural cycle IVF), দাতার ডিম্বানু গ্রহণ (Donor eggs), সারোগেসি (Surrogacy)। এছাড়া কিছু ওষুধ প্রয়োগ গর্ভধারণের চেষ্টা করা হয়। এসব প্রজননের ওষুধ (Fertility drugs) এর মধ্যে বহুল ব্যবহৃত: ক্লোমিফেন (ক্লোমিড/ clomiphene citrate) যা ডিম্বস্ফোটনে সহায়তা করে। এছাড়া অন্যান্য ওষুধের মধ্যে রয়েছে – ফলিকল স্টিমুলেটিন (Bravelle), গোনাডোট্রপি (Cetrotide), প্রজেস্টেরন (Crinone,) প্রল্যাকটিন হ্রাসকারি (Dostinex), গোনাডোট্রপিন নি:সরণকারী হরমোন (Factrel), লেট্রোজাল (Femara)

বন্ধ্যাত্বের একটি কেস:

নিম্নোক্ত বন্ধ্যাত্বের কেস হতে হোমিওপ্যাথিতে কোন দৃষ্টিভংগী গ্রহণ করে বন্ধ্যাত্বের নিরাময় করা হয়ে থাকে সে বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।

৪০ বছর বয়সী মহিলা। ১৫ বছর ধরে বিবাহিতা। কখনো গর্ভধারণ করেননি। কয়েক বছর ধরে একজন গাইনোকোলিজিস্ট দ্বারা বন্ধাত্বের চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিতে আসেন। তার বিয়ের এক বছর পর এন্ডোমেট্রিওসিসের জন্য জরুরী সিস্টেক্টমি (ovarian cystectomy) করার ইতিহাস ছিল। বন্ধাত্বের চিকিৎসার এক পর্যায়ে তার একদিকে টিউবাল ব্লকের বিষয়টি জানা যায়। এর সাথে দুর্বল ডিম্বাশয় রিজার্ভের (poor ovarian reserve) প্রমাণ ছিল। উল্ল্যেখ্য তার স্বামীর বীর্য পরীক্ষায় (semen analysis) সবকিছু  স্বাভাবিক ছিল। এ পর্যায়ে ডাক্তার তাকে অন্য কারো ডিম্বানু সাহায্যে গর্ভধারণের (donor-ovum in vitro fertilization) পরামর্শ দেন। রোগীনি অন্য চিকিৎসা গ্রহণ না করে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ছয় মাস চিকিৎসার পর তিনি স্বাভাবিকভাবেই গর্ভধারণ করেন পরবর্তীকালৈ পূর্ণ মেয়াদে একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দেন। এই কেসটির মাধ্যমে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার ক্ষেত্রে ক্ল্যাসিক্যাল হোমিওপ্যাথির ইতিবাচক ভুমিকা প্রমাণিত হয়।

বর্ণিত রোগীর মুল লক্ষণ বন্ধ্যাত্ব হলেও তার সার্বিক লক্ষণাবলী সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করা হয়। উল্ল্যেখ্য মানসিক কিছু লক্ষণের তীব্রতা ছাড়াও রোগীর ঋতুস্রাবের বেশ কিছু অনিয়ম পাওয়া যায়। ঋতুস্রাব বিলম্বে হতো, পরিমাণে অল্প, গাঢ় রক্তস্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত, গোটা গোটা এবং তা বেদনাদায়ক ছিল। তার সাদাস্রাব ও অত্যন্ত ঘন, ক্ষত সৃষ্টিকারী ছিল। তার স্তনে টিউমার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।

রেপার্টোরাইজেশন (Repertorization):

  1. Mind – confidence – want of self-confidence (low)
  2. Mind – despair – recovery
  3. Mind – fastidious
  4. Mind – irresolution, indecision
  5. Mind – irritability – trifles, of
  6. Mind – memory – weakness of – done, for what has just
  7. Mind – sadness mental depression
  8. Mouth – ulcer – tongue
  9. Teeth – caries, decayed, hollow
  10. Teeth – caries, decayed, hollow – gums, at edge of
  11. Stool – hard
  12. Stool – dry
  13. Genitalia-female – itching – vagina
  14. Genitalia-female – leucorrhea (discharge) acrid, excoriating
  15. Genitalia-female – leucorrhea (discharge) – thick
  16. Genitalia-female – menses – clotted
  17. Genitalia – female – menses – dark
  18. Genitalia – menses – irregular
  19. Genitalia – menses – late
  20. Genitalia – menses – offensive
  21. Genitalia – menses – painful
  22. Genitalia – menses – scanty
  23. Genitalia – sterility
  24. Chest – tumors – mamma
  25. Extremities – perspiration – hand – palm
  26. Extremities – perspiration – foot – sole – offensive
  27. Sleep – sleeplessness – night – first part of
  28. Sleep – sleeplessness – thought activity of mind, from
  29. Generalities – Food and drinks – cold – food – desire
  30. Generalities – food and drinks – spices – desire

কেস বিশ্লেষণ (Case analysis) হোমিওপ্যাথির মুল কথা রোগীর সার্বিক লক্ষণের ভিত্তিতে তার স্বাতন্ত্রীকরণ (individualisation) নির্ণয়। হোমিওপ্যাথি একমাত্র হলিস্টিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। এখানে কোন ২ জন রোগীর মধ্যে কখনো হুবহু সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়না। রোগীর ব্যক্তিত্ব, পছন্দ-অপছন্দ, তাপমাত্রার প্রতি সংবেদনশীলতা, সার্বিক শারীরিক-মানসিক-আবেগিক লক্ষণের, জীবনযাত্রার ধরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোথাও না কোথাও, কোন না কোন বৈসাদৃশ্য রয়েছে। হোমিওপ্যাথের কাজ – একই জাতীয় রোগীদের  প্রধান রোগ (chief complaint) একই হলেও রোগীদের মধ্যে সাদৃশ্য না খুঁজে বরং বৈসাদৃশ্য কোথায় তার অনুসন্ধান করা। অবশ্যই এই কাজটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। অনেক ধৈর্য্যের সাথে রোগীর সার্বিক লক্ষণাবলী সংগ্রহ ও তা গভীর অধ্যয়নের প্রয়োজন হয়। যাহোক রোগীর সার্বিক লক্ষণাবলী বিশ্লেষণ করে তার জন্য প্রযোজ্য সদৃশতম ওষুধ (Similimum) Silicea দিয়ে তার চিকিৎসা শুরু করা হয়। প্রতিটি ফলোআপে সার্বিক বিবেচনায় ওষুধের শক্তি ও মাত্রা পরিবর্তন করা হয়। মাঝে ২/১ বার Syphilinum প্রয়োগ করা হয়।