মেনোপজ পরবর্তী সিন্ড্রোম এর উপসর্গ মূলত: চারটি – গরম ঝলকানি (hot flashes), ঘুমের সমস্যা, নিষ্ক্রীয় যৌনজীবন এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল মেজাজ।

অন্যান্য লক্ষণ: এ্যালার্জিক সমস্যা, উদ্বেগ-দু:চিন্তা, গ্যাসজনিত পেট ফাঁপা, শরীরে অস্বাভাবিক গন্ধ, স্তনে ব্যথা, ভংগুর নখ, জিহ্বায় জ্বালা করা, অবসাদ, কাজে মনোযোগহীনতা, হজমের গন্ডগোল, ঝিঁমুনি, ক্লান্তি, দাঁত ও মাড়ির সমস্যা, চুল পড়ে যাওয়া, মূত্র ধরে রাখতে না পারা, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, খিটখিটে মেজাজ, ত্বকের চুলকানি, সন্ধির ব্যথা, সহবাসে অনীহা, স্মৃতি হ্রাস, মাংসপেশীর ব্যথা, রাতের বেলা অধিক ঘর্ম নি:সরণ, অস্টিওপরোসিস, প্যানিক ডিজঅর্ডার, হাত-পায়ের অবশ ভাব, ওজন বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি।

প্যাথলজিক্যাল দৃষ্টিকোন হতে দেখলে এটা কোন জটিল সমস্যা না হলেও অনেক ক্ষেত্রে রোগীর রোগলক্ষণ তীব্র ও যথেষ্ট কষ্টকর হতে পারে। মেনোপজকালীন নারীদের হরমোনাল সিস্টেমের পরিবর্তনের কারণে নারীরা এ ধরণের রোগে ভুগে থাকেন। সার্বিক স্বাস্থ্য ভাল থাকলে এই ধরণের লক্ষণ হতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হয় এমন কিছু দেখা যায়না। তবে জরায়ু, ওভারি ও স্তনে সিস্ট টিউমার ইত্যাদি দেখা গেলে রোগীর কেসটি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা উচিত। হোমিওপ্যাথি এ ধরণের লক্ষণের দ্রুত নিরাময় করতে পারে।

মেনোপজে যাওয়া একজন নারীর কেস শেয়ার করছি। এই রোগীর ক্ষেত্রে কোন মারাত্মক শারীরিক ও আবেগিক সমস্যা দেখা যায়নি। মাঝে মধ্যে তার হালকা একিউট রোগ হতো।

তার পিকুলিয়ার লক্ষণগুলি হলো: পা হতে গরম ঝলকানি ভাব বের হয় যা তার শরীরের উপরের দিকে উঠতে থাকে, সাথে থাকে অস্থিরতা, তিনি বাম পাশে শয়ন করেন, তাকে কেউ অনুসরণ করেন এমন স্বপ্ন দেখেন প্রায়শ:ই, শীতার্ত ভাব, কাঁচা সবজি ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যে আগ্রহ, চোখের বাম পাশে ফোলাভাব।

তীব্র লক্ষণ: অনেকক্ষণ ঘুমালে মাথা ব্যথা, সব সময় কিছু না কিছুতে ব্যস্ত থাকার ইচ্ছা বা প্রবণতা, গরম লাগার অনুভূতি যা রাতে অধিক, বিদ্যুত চমকালে ভয়।

উল্ল্যেখ্য রোগীর সকল লক্ষণ বিবেচনায় আনা হয়নি কারণ তার দরকার ছিলনা।

ওষুধের পারস্পারিক তুলনা: কেসটি বিশ্লেষণে যে সকল ওষুধ গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় তাদের পারষ্পারিক তুলনা নিম্নরূপ:

সালফার: সালফারেরর কী-নোট লক্ষণ – ফ্লাশ বা গরম লাগার অনুভূতি, দীর্ঘক্ষণ ঘুমানোর ফলে মাথাব্যথা, সহজেই ঘেমে যাওয়া এবং বাম পাশে শয়ন। ২ টি লক্ষণ সালফারের সাথে মিলেনা যেমন – সাধারণ শীতার্তভাব এবং সব সময় ব্যস্ত থাকার প্রবণতা।

সিপিয়া: সিপিয়ার মেনোপজকালীন লক্ষণসমূহ প্রবল। এর রোগী বাম পাশে শয়ন করে, সাধারণ শীত শীত ভাব ও সর্বদা কোন না কোন কাজে ব্যস্ত থাকার প্রবণতা। সিপিয়াতে চোখের অভ্যন্তরীণভাগে ফোলাভাব থাকে। সে স্বপ্নে দেখে তাকে কে যেন অনুসরণ করছে।

ক্যাল্কেরিয়া কার্বোনিকা: এটার কী-নোট লক্ষণ প্রচুর পরিমাণে ঘাম নি:সরণ, সাধারণ শীতার্ততা, বাম পাশে শয়ন। হট ফ্লাশের লক্ষণটিও এতে আছে।

ল্যাকেসিস: মেনোপজকালীন অনেক লক্ষণ ল্যাকেসিসের থাকলেও অধিকাংশ লক্ষণ প্যাথলজিক্যাল নির্ভর। অনেক ক্ষণ ধরে ঘুমালে এর রোগলক্ষণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু একটি বিষয় ঠিক রোগীর লক্ষণের বিপরীত – তা হলো শয়নের পার্শ্ব। বাম পাশে শয়নে রোগীর কষ্ট বৃদ্ধি পায়।

ফসফরাস: ল্যাকেসিসের মত বাম পার্শ্বে শয়নে লক্ষণের বৃদ্ধি।

লাইকোপডিয়াম: বাম পার্শ্বে শয়নে বৃদ্ধি।

সার্বিকভাবে সিপিয়ার কী-নোট লক্ষণ, প্যাথলজি নির্ভর বিশ্লেষণ এবং রোগীর সার্বিক স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে রোগীকে সিপিয়া প্রেসক্রাইব করা হয় ও সে দ্রুত নিরাময় লাভ করা হয়।