হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যক্তির ও তার সার্বিক লক্ষণের স্বাতন্ত্রীকরণ আবশ্যক। স্বাতন্ত্রীকরণ মূলত রোগীর লক্ষণের ও ওষুধের লক্ষণের পার্থক্য ও সাদৃশ্য নির্ণয়ের উপায়। একই জাতীয় অন্য রোগীর সাথে তুলনা করতে রোগী ও তার লক্ষণের স্বাতন্ত্রীকরণ অত্যাবশ্যক। এটা সফল চিকিৎসার পূর্বশর্ত।

আংগুলের ছাপের অনুযায়ী পৃথিবীর ২ জন মানুষ কখনো ১০০% এক নয়, তাদের রোগ একই জাতীয় হলেও তা এক নয়। অতএব, একই জাতীয় রোগে চিকিৎসাও এক হতে পারেনা।

কিভাবে? যেমন ধরুণ “মাথাব্যথা” কোন রোগীর মেইন কমপ্লেইন। তো মাথাব্যথার ওষুধ আছে ৫০০ এর অধিক। কোনটি রেখে কোনটি দেবেন? দরকার তাই স্বাতন্ত্রীকরণ নির্ণয় (individualization)। কারো মাথাব্যথা রিউমেটিজমের কারণে, কারো সিঁড়ি বেয়ে উঠলে, কারো রেগে গিয়ে, কারো অধিক মনসংযোগ করে কিছু করলে, কারো ঠান্ডা-সর্দিজনিত কারণে, কারো মাথায় চিঁরুণি করলে, কারো বা অন্যের সাথে মতবিরোধ হলে। এমনিভাবে বহু কারণে বা অবস্থায় মাথাব্যথার উপশম হতে পারে। এমন হাজারো বিষয় ও লক্ষণের হ্রাস-বৃদ্ধি আমাদের বিশ্লেষণ করতে হয়।

আধুনিক চিকিৎসার মত সাধারণীকরণ (generalization) নয়। কারণ সাধারণীকরণ তথা সব রোগীর মাথাব্যথার চিকিৎসায় একই ওষুধ কখনো হতে পারে না। আধুনিক চিকিৎসা তাই আরোগ্যদায়ক নয়; সাময়িক উপশমদায়ক বলা চলে।

আমরা চেষ্টা করি ১ টি ওষুধে পৌঁছুতে। এটাই চ্যালেঞ্জ; কিন্তু এটিই আরোগ্যের সঠিক পথ।

ধরুন, স্থুলতার একজন রোগী, ঘন ঘন ঠান্ডা সর্দি-কাশিতে ভুগে। রোগী মানসিক-আবেগিক স্তরে অপরিপক্ক (immature)। আত্মবিশ্বাসের বড়ই অভাব। অন্য মানুষের উপর নির্ভর করে থাকে। অন্যের সুরক্ষার দরকার হয় সবকিছুতেই। স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা। শারীরিক স্তরে দেখা যায় তার শরীরের নির্দিষ্ট অংগ তার বষসীদের তুলনায় অল্পোন্নত বা অপূর্ণবিকশিত। এরা কিছুটা সন্দেহপ্রবণ ও বটে। কেমন সন্দেহপ্রবণ? যেমন- রোগী মনে করে মানুষ তাদের দেখে হাসাহাসি করে, সমালোচনা করে, কেউ তাদের দিকে তাকালেই মনে করে তার প্রসংগে কথা বলছে। শিশুরা লজ্জায় মানুষের সামনে যেতে চায়না, মায়ের আঁচলের নীচে বা আসবাবপত্রের পিছনে লুকায়। এদের একটা বড় অংশের সকল প্রকার ফলমূলে বিতৃষ্ণা। তো এই রোগীর রোগের নাম “স্থুলতা” হোক বা “ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার প্রবণতা” হোক অথবা কোন “সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধা” থাকুক বা “স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা” থাকুক তাকে আমরা Baryta carb দিয়ে নিরাময়ের চেষ্টা করবো যদিও এসব লক্ষণের জন্য আরোও অনেক ওষুধ আছে। ব্যারাইটা কার্বই তার ওষুধ। কারণ এটাই তার লক্ষণের স্বাতন্ত্রীকরণে পাওয়া সৃদশতম ওষুধ। বলা বাহুল্য বহু হোমিওপ্যাথ স্বাতন্ত্রীকরণ বুঝেন না বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সদৃশতম ওষুধ প্রয়োগ না করে নিকটিসদৃশ ওষুধ বা close remedy প্রয়োগ করেন যা নিরাময় না করে রোগীর কেসটি জটিল করে তোলে।