ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) বা প্রস্রাবে ইনফেকশন হল মূত্রতন্ত্রের যে কোনো অংশের – কিডনি, ব্লাডার, ইউরেটার, ইউরেথ্রার যে কোন স্থানে সংক্রমণ হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূত্রাশয় এবং মূত্রনালীতে সংক্রমণ দেখা যায়।

পুরুষদের তুলনায় মহিলারা প্রস্রাবের এই সংক্রমণের অধিক ঝুঁকিতে থাকে। মূত্রাশয়ের সংক্রমণ বেদনাদায়ক এবং বিরক্তিকর। সংক্রমণ রোগীর কিডনিতে ছড়িয়ে পড়লে গুরুতর পরিণতি ঘটতে পারে।
এ্যান্টিবায়োটিক হল ইউটিআই-এর সাধারণ চিকিৎসা। কিন্তু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী পুন: পুন: সংক্রমণের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা পেতে পারেন। এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নাই।
লক্ষণ (symptoms of urinary tract infection):

1. প্রস্রাব করার জন্য একটি শক্তিশালী, অবিরাম তাগিদ
2. প্রস্রাব করার সময় জ্বলন্ত সংবেদন
3. ঘন ঘন, অল্প পরিমাণে প্রস্রাব করা
4. প্রস্রাব মেঘলা দেখায়
5. প্রস্রাব লাল, উজ্জ্বল গোলাপী বা কোলা রঙের দেখায় – যা প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি নির্দেশ করে
6. নানান রকম তীব্র গন্ধযুক্ত প্রস্রাব
7. মহিলাদের শ্রোণীতে বা তলপেটে ব্যথা
8. পুরুষদের মলদ্বারে ব্যথা

ইউটিআই এর প্রকার: সংক্রমণের স্থান অনুযায়ী ইউটিআই কে নিম্নোক্ত ভাবে ভাগ করা যায়:

1. কিডনির সংক্রমণ (acute pyelonephritis)
2. মূত্রাশয়ের সংক্রমণ (cystitis)
3. মূত্রনালীর সংক্রমণ (urethritis)

কারণসমূহ (causes of urinary tract infection):
1. মূত্রনালীর সংক্রমণ সাধারণত ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালী দিয়ে মূত্রাশয়ে প্রবেশ করলে এবং মূত্রাশয়ে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করলে দেখা যায়।
2. ইউটিআই নারীদের মধ্যে অধিক। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মূত্রনালী ছোট থাকে। যার ফলে একজন মহিলার মূত্রাশয়ে ব্যাকটেরিয়া পৌঁছে সংক্রমণ ঘটাতে কম সময় লাগে।
3. সক্রিয় যোনজীবন।
4. নির্দিষ্ট ধরণের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার।
5. মেনোপজকালীন বা মেনোপজ পরবর্তী লক্ষণ। ইস্ট্রোজেনের অভাব মূত্রনালীর পরিবর্তন ঘটায় যা এটিকে সংক্রমণের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।
6. মূত্রনালীর কাঠামোগত অস্বাভাবিকতা।
7. মূত্রনালীতে ব্লকেজ থাকা। কিডনিতে পাথর বা বর্ধিত প্রোস্টেট মূত্রাশয় প্রস্রাব আটকে দিতে পারে এবং ইউটিআই-এর ঝুঁকি বাড়ায়।
8. ই্মিউন সিস্টেমের দুর্বলতা।
9. প্রস্রাব করার জন্য ইউরিন ক্যাথেটারের ব্যবহার।

জটিলতা:
1. পুন: পুন: সংক্রমণে জটিলতা বাড়ে। বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে যারা তিন বা ততোধিক বার ইউটিআই অনুভব করেন।
2. কিডনি সংক্রমণ (পাইলোনেফ্রাইটিস) চিকিৎসা না করায় ইউটিআই-এর কারণে কিডনির স্থায়ী ক্ষতি, বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের মধ্যে।
3. মহিলাদের কম ওজন বা অকাল শিশু জন্ম দেওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা (Homeopathic treatment of UTI)
হোমিওপ্যাথ সার্বিক রোগলক্ষণ সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করে চিকিৎসা দিবেন। সাধারণত যে সকল বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় তা হলো:
1. আপনি কখন প্রথম আপনার লক্ষণগুলি লক্ষ্য করেছিলেন?
2. অতীতে মূত্রাশয় বা কিডনি সংক্রমণের জন্য চিকিৎসা করা হয়েছে কিনা?
3. আপনার অস্বস্তি বা কষ্ট কতটা গুরুতর?
4. আপনি কত ঘন ঘন প্রস্রাব করেন?
5. প্রস্রাব করলে কি আপনার উপসর্গগুলি উপশমিত হয়?
6. আপনার কি পিঠে বা কোমরে ব্যথা আছে?
7. আপনার কি জ্বর হয়েছে? হলে তাপমাত্রা কেমন?
8. আপনি কি আপনার প্রস্রাবে যোনি স্রাব বা রক্ত লক্ষ্য করেছেন?
9. আপনি কি যৌনজীবনে সক্রিয়?
10. আপনি কি গর্ভনিরোধক ব্যবহার করেন? করলে কি ধরনের?
11. আপনি কি গর্ভবতী?
12. আপনার কি অন্য কোন রোগের জন্য চিকিৎসা করা হচ্ছে?
13. আপনি কি কখনও ক্যাথেটার ব্যবহার করেছেন?
14. আনুষংগিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থা।

জীবনধারা এবং ঘরোয়া প্রতিকার:

1. প্রচুর পানি পান করুন। পানীয় জল আপনার প্রস্রাব পাতলা করতে সাহায্য করে এবং ঘন ঘন প্রস্রাব নিশ্চিত করে – সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে ব্যাকটেরিয়াকে মূত্রতন্ত্র থেকে ফ্লাশ করে দেয়।
2. সামনে থেকে পিছনে পরিষ্কার করুন: প্রস্রাব বা পায়খানা করার পরে মলদ্বার অঞ্চলের ব্যাকটেরিয়া যোনি এবং মূত্রনালীতে ছড়িয়ে পড়া রোধে সামনে থেকে পিছনে – এই প্রক্রিয়ায় পরিষ্কার করতে হবে।
3. সহবাসের পরপরই আপনার মূত্রাশয় খালি করুন। এছাড়াও ব্যাকটেরিয়া ফ্লাশ করতে এক গ্লাস পানি পান করুন। যৌনাঙ্গে ডিওডোরেন্ট স্প্রে বা অন্যান্য পণ্য যেমন – ডুচ এবং পাওড়ার ব্যবহার করলে মূত্রনালীতে জ্বালা হতে পারে।