উচ্চ রক্তচাপকে (hypertension) সচরাচর “নীরব ঘাতক” হিসাবে উল্লেখ করা হযয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ১.২৮ বিলিয়ন প্রাপ্ত বয়ষ্ক মানুষ যাদের বয়স ৩০-৭৯ তারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এদের অধিকাংশই আমাদের মত মাঝারি ইনকামের দেশের মানুষ। বিশ্বব্যাপী প্রতি বৎসর ২০ মিলিয়ন মানুষ মারা যান কার্ডিওভাসকুলার রোগে যার অন্যতম কারণ হলো এই হাইপারটেনশন। কনভেশনাল মেডিসিনে রক্তচাপ নরমাল রাখার জন্য জীবনব্যাপী চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু ক্ল্যাসিক্যাল হোমিও চিকিৎসায় এটি স্থায়ীভাবে নিরামযোগ্য।

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন এমন একটি রোগ যেখানে ধমনীর দেয়ালে রক্তের চাপ ক্রমাগতভাবে খুব বেশি থাকে। জীবনযাত্রার পরিবর্তন তথা বিশৃংখলাই রক্তচাপের মূল কারণ।

রক্তচাপের রোগীদের ৪৬% মানুষ জানেনই না যে তারা এ রোগে ভুগছেন। ৪২% রোগীর ডায়গনসিস হয় এবং তারা চিকিৎসা নেন।

আপনি কোন ধরণের হাইপারটেনশনে ভুগছেন? ইডিওপ্যাথিক না ম্যালিগ্নান্ট হাইপারটেনশন? এ ২ টার পার্থক্য আগে জেনে নিই- পার্থক্য ৩ টি বিষয়ে যেমন –

  1. তীব্রতা: ম্যালিগন্যান্ট হাইপারটেনশন হল একটি গুরুতর, দ্রুত অগ্রসরমান অবস্থা যার জন্য জরুরী চিকিৎসা প্রয়োজন। ইডিওপ্যাথিক উচ্চ রক্তচাপ একটি অজানা কারণে অপরিহার্য (ইসেনশিয়াল) উচ্চ রক্তচাপকে বোঝায় যা সময়ের সাথে সাথে বিকাশ লাভ করে।
  2. অঙ্গের ক্ষতি: ম্যালিগন্যান্ট হাইপারটেনশন মস্তিষ্ক, হার্ট, কিডনি এবং চোখের মতো অংগগুলির তীব্র ক্ষতির কারণ হতে পারে, যেখানে ইডিওপ্যাথিক হাইপারটেনশনের প্রভাবগুলি আরও ধীরে ধীরে এবং দেরিতে হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
  3. লক্ষণ: ম্যালিগন্যান্ট হাইপারটেনশন মাথাব্যথা, ঝাপসা দৃষ্টি এবং মেন্টাল কনফিউশনের মতো গুরুতর লক্ষণগুলির সাথে উপস্থিত হতে পারে, যখন ইডিওপ্যাথিক হাইপারটেনশনের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায়শই তেমন কোন লক্ষণ থাকে না।

যতক্ষণ না গুরুতর কোন স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করে ততোক্ষণ পর্যন্ত বহু মানুষের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের মূল লক্ষণ দৃষ্টিগোচর হয় হয়না।

উচ্চ রক্তচাপের কারণ কি?

  1. জেনেটিক্স: উচ্চ রক্তচাপের পারিবারিক ইতিহাস আপনার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  2. বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বাড়ে।
  3. স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন হৃৎপিণ্ড এবং রক্তনালীতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ সৃষ্টি করে।
  4. কিছু খাদ্য: অধিক লবণ, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কম পটাসিয়ামযুক্ত খাদ্য গ্রহণও অবদান রাখতে পারে।
  5. শারীরিক কার্যকলাপের অভাব।
  6. ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন।
  7. দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস বা মানসিক চাপ।
  8. কিছু রুগ্নাবস্থা যেমন – কিডনি রোগ, ডায়বেটিস এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  9. কিছু ওষুধ: কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রক্তচাপ বাড়াতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ:

  1. মাথাব্যথা: গুরুতর বা অবিরাম মাথাব্যথা, বিশেষ করে মাথার পিছনে, উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ হতে পারে।
  2. দৃষ্টি পরিবর্তন: ঝাপসা দৃষ্টি বা দৃষ্টিশক্তির অন্যান্য সমস্যাও থাকতে পারে কখনও কখনও।
  3. বুকে ব্যথা: বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি উচ্চ রক্তচাপ-সম্পর্কিত হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে।
  4. শ্বাসকষ্ট: সামান্য পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট হলে তা উক্ত রক্তচাপের কারণ হতে পারে।
  5. অনিয়মিত হৃদস্পন্দন: কিছু ব্যক্তির সামান্য পরিশ্রমে বুক ধড়ফড় করে বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হয়ে থাকে।
  6. নাক দিয়ে রক্তপাত: যদিও বিরল, তবে উচ্চ রক্তচাপের কিছু লোকের নাক দিয়ে রক্তপাত হতে পারে।

এতক্ষণ যে যে লক্ষণগুলি আলোচনা করা হলো তা সবার ক্ষেত্রে থাকতেই হবে এমন শর্ত নয়। কারণ, এগুলো অন্যান্য রোগের ও লক্ষণ হতে পারে।

অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির লক্ষ্য জীবনব্যাপী ওষুধ প্রয়োগ করে রক্তচাপকে স্বাভাবিক লেভেলে রাখা।

কিন্তু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা স্থায়ী নিরাময় সম্ভব।

হোমিওপ্যাথিতে রক্তচাপ নিরাময়ের জন্য প্রায় ১০০ টি ওষুধ রয়েছে। সার্বিক কেস বিশ্লেষণ করে লক্ষণের সদৃশতম ওষুধ প্রয়োগ করে রোগীকে দ্রুত নিরাময় করা সম্ভব।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শরীরের নিজস্ব নিরাময় প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে। এই চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনযাত্রার পরিবর্তন উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে সুস্থ জীবনযাপন করতে সহায়তা করে।

যেহেতু উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগের মতো গুরুতর জটিলতার কারণ হতে পারে, তাই নিয়মিত চেক-আপ করা উচিত। বিশেষ করে যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপের পারিবারিক ইতিহাস, স্থূলতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অভ্যাসের মতো ঝুঁকির কারণ থাকে এবং আপনার সন্দেহ হয় যে আপনার উচ্চ রক্তচাপ আছে বা আপনি এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করছেন, তাহলে নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য আজই একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথের শরণাপন্ন হোন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *