মাথাব্যথা অনেক ধরণের – তার মধ্যে মাইগ্রেন নামক মাথাব্যথা ভয়ংকর। সাধারণত মাইগ্রেণের ব্যথা মাথার একপাশে থাকে। কিন্তু আমরা পার্শ্ব পরিবর্তন হতেও দেখি। এর সাথে আরো কিছু লক্ষণ থাকে যেমন বমি বমি ভাব বা বমি। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এ ব্যথা কদিন বা কয়েক সপ্তাহ পর পর দেখা দেয়।

কারণসমূহ:

  1. জিনগত কারণ: মাইগ্রেন পরিবারে চলতে থাকে, এটি একটি জেনেটিক প্রবণতা নির্দেশ করে।
  2. ট্রিগার: কিছু কারণ সংবেদনশীল ব্যক্তিদের মধ্যে মাইগ্রেনকে ট্রিগার করতে পারে, যার মধ্যে চাপ, হরমোনের পরিবর্তন (যেমন, মাসিক), কিছু খাবার (যেমন, পুরাতন পনির, প্রক্রিয়াজাত মাংস), ক্যাফেইন, অ্যালকোহল, উজ্জ্বল আলো, উচ্চ শব্দ এবং তীব্র গন্ধ।
  3. মস্তিষ্কের পরিবর্তন: মাইগ্রেনের কারণে মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহ এবং রাসায়নিক কার্যকলাপের অস্বাভাবিক পরিবর্তন জড়িত বলে মনে করা হয়।

লক্ষণ: মাইগ্রেনের উপসর্গ ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হতে পারে তবে প্রায়শই এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে:

  1. ঝাঁকুনি বা স্পন্দিত মাথাব্যথা, সাধারণত মাথার একপাশে।
  2. আলোক আতংক বা ফটোফোবিয়া যা সুর্যের আলো বা যে কোন কৃত্রিম আলো হতে পারে। এছাড়া শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা যেমন – কোন জনসমাবেশ, বিকট আওয়াজ, কলিং বেল, রিংটোন ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে কেউ পাশে শব্দ করে কথা বললেও ব্যথা তীব্রতর হতে পারে।
  3. বমি বমি ভাব এবং বমি।
  4. কেউ বা মাইগ্রেনের সাথে চোখের আলোর ঝলকানি বা অন্ধ দাগ দেখতে পারেন।
  5. ক্লান্তি এবং বিরক্তি।
  6. হালকা মাথা ব্যথা বা মাথা ঘোরা।

চিকিৎসা:

এ্যালোপ্যাথি – হোমিওপ্যাথি ২ ভাবেই চিকিৎসা চলতে পারে।

অ্যাসপরিনিন বা এ্যান্টিইনফ্লামেটরি ড্রাগস কখনো উপশম দিয়ে থাকে। একিউট ও ক্রণিক উভয় প্রকার মাইগ্রেণের জন্য যে সব ওষুধ ব্যবহার করা হয় তা সাময়িক উপশম দেয় মাত্র। স্থায়ী নিরাময় করেনা। শেষে ডাক্তার বলে দেন মাইগ্রেণ কখনো সারেনা। মাইগ্রেণের ফিকোয়েন্সি ও তীব্রতা কমাতে যে সকল ওষুধ ব্যবহার করা হয় তাতে রোগীর মধ্যে নানান রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

আসুন দেখি হোমিও চিকিৎসা কি স্থায়ী নিরাময়ের ব্যবস্থা আছে?

হোমিও চিকিৎসায় মাথাব্যথার জন্য ৫ শতাধিক ওষুধ আছে এবং মাইগ্রেণের জন্য আছে প্রায় ২০০ ওষুধ। প্রতিটি মাইগ্রেণ রোগীর লক্ষণ সংগ্রহ করে, লক্ষণসমষ্টি বিশ্লেষণ করে – তার জন্য উত্তম ওষুধটি কি তা নির্ধারণ করা হয়।

কিছু লক্ষণ এখানে আলোচনা করবো:

  1. মাথার এক পাশে ব্যথা, কখনো বা একপাশ হতে অন্য পাশে ব্যথা স্থানান্তরিত হয়।
  2. মাথাব্যথা সহ বাম বাহুতে ব্যথা।
  3. একপাশের ব্যথা থেমে অন্যপাশে ব্যথা তীব্রতর হয়।
  4. অতিরিক্ত কফি সেবন হতে মাথাব্যথা।
  5. মাথাব্যথা কানের পিছনে প্রসারিত হয়, বিশেষ করে মুক্ত বাতাসে গেলে।
  6. একপাশে কিন্তু নির্দিষ্ট বিন্দুতে ব্যথা।
  7. ব্যথা চোখে, ঘাড়ে, প্রসারিত হয়।
  8. ঘাড় শক্ত হয়ে যায়।

এছাড়া মাথাব্যথা কিছু কারণে হ্রাস-বৃদ্ধি পেতে পারে যেমন:

সূর্যালোকে, রান্নাঘরে বেশীক্ষণ অবস্থান করলে, মাসিকের সময়, মানসিক কোন চাপে, আবহাওয়ার পরিবর্তনে, ভোরে ঘুম হতে ওঠামাত্র, ক্ষুধা লাগলে, দেরী করে নাস্তা করলে, দিন রাতে নির্দিষ্ট সময়ে, সূর্যোদয় হতে সুর্যাস্ত, একই সময়ে, সকালে শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত, সকালে উঠে চোখ খোলামাত্রই ব্যথা, উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখে, ঠান্ডা লেগে, হাটাহাটি করলে, বাতাসের ঝাপটায়, ভাইটাল ফ্লুইড লস হলে, সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলে, কোন কিছু গভীর মনোযোগে করলে-শুনলে, রাত জেগে থাকার চেষ্টা করলে, গোসলের পর, বিছানায় যাওয়া মাত্রই ব্যথা, বিছানা ছাড়তেই হবে, পিছন-সামনের দিকে মাথা ঝুঁকালে, চুল বেঁধে রাখলে, নাক ঝাঁড়লে, নি্দিষ্ট কোন খাবারে, গাড়ীতে চড়লে, সর্দির কারণে, মাথাব্যথা ঘাড় ব্যথা করলে, আবহাওয়ার পরিবর্তনে, নারীদের মেনোপজকালীন, চোখ খোলা রাখতে পারেনা, মনে করে কিছুতে চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ঘাড়ে বা মাথায় কোন কাপড় থাকলে, কফি সেবনে, কোন ঘ্রাণ থেকে, রতিক্রিয়ার পর ব্যথা, চিরূনি করলে, মনে করে মাথায় রক্ত জমে আছে, সর্দি লাগলে বা সর্দি চাপা দিলে, কাশি দিলে, চুল কাটার পর, আদ্র ঘরে বাস করলে, অন্ধকারে, দাঁত ওঠাকালীন, ডায়রিয়ার সময় বা আগে-পরে, খাবার বা পানীয় গ্রহণের আগে পরে, ওষুধের অপব্যবহারে, নাক দিয়ে রক্তপাতের পর, শারীরিক-মানসিক পরিশ্রমে, পেটে গ্যাস হলে বা গ্যাস্ট্রিক জনিত, প্রতি পদক্ষেপে মাথাব্যথা, ভয় পেয়ে, মনে হয় মাথায় ভেতর কেউ হাতুড়ি মারছে, টুপি পরলে, ঝাঁকুনি লাগলে, অতি আনন্দে, হাসাহাসি করলে, ওজন তুললে, কিছু চিবালে, চলাফেরা করলে, গর্ভকালীন, লেখাপড়া করলে, যানবাহনে উঠলে, স্কুলে গেলে, অতিরিক্ত রতিক্রিয়ায়, সামনে ঝুকলে, অতিরিক্ত চোখের ব্যবহারে, চর্মরোগ চাপা দিলে, বজ্রপাতের আগে সময়ে, ধুমপান করলে, মাথা ঘোরালে, মাথা ঢেকে না রাখলে, বিরক্ত হয়ে, পা ভেজালে, মাথায় কিছু পেঁচালে, মাথাব্যথা শরীরের নির্দিষ্ট কোন স্থানে সরে যায়।

মাথাব্যথার নানান ধরণ:

ছিড়ে ফেলার মত, ভিতরে কোন ক্ষত আছে এমন, খোঁচামারা বা সুঁচ ফোটানোর মত, মাথায় ঢেউ খেলার মত ব্যথা, বিদ্যুতের শকের মত, ব্রেন চেপে ধরার ন্যায়, চিমটি কাটারমত, নখ দিয়ে চাপ দিলে যেমন অনুভূতি হয় তেমন, মাথায় ঝাঁকুনি দেয়ার মত, বোরিং পেইন, কেটে ফেলার মত, মাথা ফেটে যাবার মত, হাতুড়ি মারার মত, জ্বালাকর ব্যথা।

পেইনের সাথে অন্য লক্ষণ থাকতে পারে যেমন- কাশি, ডায়রিয়া, ভয়কর স্বপ্ন, পাইলস্, কোমরব্যথা, বমি ভাব বা বমি, পেটব্যথা, প্রস্রাবের সমস্যা।

মাথাব্যথা কারো প্রতিদিন, ২-১ দিন অন্তর, প্রতি ৭ দিনি ১০ দিন, ১৪ দিন, ৬ সপ্তাহ পর পর। নির্দিষ্ট ঘন্টায়। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে।

প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা:

লাইফস্টাইল পরিবর্তন: ট্রিগারগুলি সনাক্ত করা এবং এড়ানো, নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী বজায় রাখা, স্ট্রেস পরিচালনা করা এবং পানিশুন্যতায় না ভোগা  মাইগ্রেন প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

যেসব ব্যক্তি মাইগ্রেনে ভুগছেন তাদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য নির্ণয় করে চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *