পাইলস অর্শ্বরোগ নামেও পরিচিত। অপারেশন ছাড়াই পাইলস্ নিরাময় সম্ভব। আজকের কেস থেকে তা প্রমাণিত হবে ইনশাল্লাহ্। পাইলস্ অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক হতে পারে। রক্তপাত হতে পারে বা নাও হতে পারে।

আগে জেনে নিই পাইলসের কারণ কি?

কারণ বহুবিধ, যেমন-

  1. মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ বা কোঁথ দেয়া।
  2. দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ায় ভোগা।
  3. দীর্ঘ সময় ধরে টয়লেটে বসে থাকা।
  4. গর্ভাবস্থা এবং প্রসবকালীন জটিলতার কারণে পাইলস্।
  5. অতিরিক্ত শারীরিক ওজন।
  6. ভারী বস্তু উত্তোলন।
  7. আশযুক্ত খাদ্য গ্রহণ না করা এবং
  8. জেনেটিক্স বা বংশগত রোগ প্রবণতা।

পাইলস এর লক্ষণ কি?

  1. মলত্যাগের সময় মলদ্বারে ব্যথা বা অস্বস্তি ভাব।
  2. মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি বা জ্বালা।
  3. মলত্যাগের সময় বা টয়লেট পেপারের রক্ত আসা। যদিও সবার ক্ষেত্রে রক্তপাত হতে দেখা যায়না।
  4. মলদ্বারের মুখে বা ভিতরে বেদনাদায়ক পিণ্ড বা লাম্ফ।
  5. মলদ্বার হতে শ্লেষ্মা স্রাব বা মিউকাস নির্গমন
  6. অসম্পূর্ণ মলত্যাগের অনুভূতি।
  7. কখনো বা নি:সাড় মলত্যাগ।
  8. পাইলস্ এর সাথে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন থাকতে পারে। কারোবা লাম্বাগো বা ব্যাক পেইন থাকতে পারে
  9. পাইলস্ এর পিন্ডগুলি শক্ত বা নরম হতে পারে, কখনো বা আংগুরের গুচ্ছের মত মনে হতে পারে
  10. মহিলাদের মাসিকের সময়ে, আগে-পরে বা গর্ভকালীন ও বাচ্চা প্রসবের পর পাইলসএর লক্ষণ দেখা দেয়
  11. কারো বা পাইলস্ এর পিন্ডগুলি মলত্যাগের সময় এমনকি মলদ্বার হতে বায়ু নি:সরণের সময় বা প্রস্রাব করার সময় বেরিয়ে আসে
  12. মানসিক চাপেও পাইলস্ -এর কষ্ট বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়

পাইলসের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ

হোমিওপ্যাথি প্রতিটি রোগীর শারীরিক, আবেগিক এবং মানসিক দিক বিবেচনা করে। উদ্দ্যেশ্য রোগীটি কোন কারণে অন্য সবার থেকে পৃথক বা স্বতন্ত্র্য তা নির্ণয় করা হয়। তাছাড়া পাইলস্ এর মূল লক্ষণগুলির মধ্যেও ভিন্নতা রয়েছে যা জানা জরুরি।

রোগীর কেস থেকে ইনশাল্লাহ্ ষ্পষ্ট ধারণা হবে।

কেস: রোগীর বয়স – ৪০

  1. ক্রণিক পাইলস্ – দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন।
  2. বৃহৎ পাইলস্। সাধারণত: মলদ্বারের ভিতরের দিকে ফুলে থাকে। তবে অধিকক্ষণ কোথ দিলে পিন্ড আকারে বেরিয়ে আসে
  3. অত্যন্ত বেদনাদায়ক, বিশেষ করে পায়খানার সময় অধিক কোধ দিলে
  4. স্পর্শে পাইলসের কষ্ট বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে শৌচকার্যের সময়।
  5. ঘন ঘন মলবেগ আসলেও তেমন মলত্যাগ হয়না
  6. রোগীর পাইলস্ এর জন্য খুব একটা রক্তপাত হয়না। ৩-৬ মাসে একবার সামান্য রক্ত দেখা দেয়
  7. মেজাজ অত্যন্ত খিটখিটে – কলহপ্রবণ
  8. রোগীর ধৈর্যের বড়ই অভাব
  9. সামান্য কারণেই মনে কষ্ট পান
  10. রোগী অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং নিজের সম্পর্কে খুবই উচ্চাকাংখা পোষণ করেন
  11. যে কোন ধরণের, শব্দ, মিউজিক, গন্ধ ও আলোয় অতি সংবেদনশীল
  12. মানসিক চাপ নিয়ে ঘুমাতে যান এবং রাত ৩-৪ টার দিকে ঘুম ভেংগে যায়,
  13. রোগী  অত্যন্ত শীতকাতর
  14. রোগী অধিক পরিমানে চা পান করে থাকেন।
  15. চা কফি, ধুমপানে তার লক্ষণ বৃদ্ধি পায়।
  16. অধিক ঝাল – মশলাযুক্ত খাবার অনেক পছন্দ করেন।

আপনারা লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন যে, আমরা রোগীর মুল কষ্ট পাইলস্ হলেও রোগীর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য নির্ণয়ের জন্য তার পুরো বিষয়াদি জানান চেষ্টা করেছি। অন্যথায় ৫ শতাধিক ওষুধ হতে তার জন্য সদৃশতম ওষুধ কোনটি তা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। আমরা এই রোগীকে নাক্স ভমিকা নামক ওষুধ দিয়ে পাইলস্ নিরাময় করি।

গবেষণায় দেখা গেছে পাইলস্ অপারেশন করলেও আবার রোগীর পাইলস্ এর সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া সবচেয়ে ভয়াবহ যে বিষয় তা হচ্ছে, অপারেশনের ৫/৬ বছরের মধ্যে রোগীর কোন না কোন ধরণের হৃদপিন্ডের গোলযোগ দেখা যায়।

মলদ্বারের আরো অনেক রোগ রয়েছে যেমন – ফিশার, ফিশ্চুলা ইত্যাদি। কোন বিষয়ে আগামীতে জানার আগ্রহ তা কমেন্টে জানান। ইনশাল্লাহ্ ধারাবাহিক ভাবে তা প্রকাশিত হবে। এছাড়া যে কোন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়ে জানতে সংকোচ না করে কমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *