রোগীর বয়স ৩৬। প্রধান সমস্যা ক্রণিক এ্যাজমা। ৮/৯ বছর ধরে ইনহেলার ও আরো কিছু ওষুধ নিয়মিত ব্যবহার করতেন।

সর্বশেষ ফলোআপে উনি আসেন ১৮ মাস পর ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ১৮ মাসে একবার ও তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়নি।

তিনি সর্বমোট ৮ টি ফলোআপ সাক্ষাতে আসেন। ১-৩ মাস অন্তর।

প্রথম সাক্ষাত: ৫ মার্চ ২০২১

লক্ষণাবলী:

  1. ধুলোবালি থেকে হাঁচির উদ্রেক হতো, যা থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শ্বাসকষ্টের সূত্রপাত ঘটাতো।
  2. এছাড়া ঠান্ডা লেগে শ্বাসকষ্ট হতো।
  3. ঠান্ডা বাতাসে, জোরে কথা বললে, দ্রুত হাটলে, সিঁড়ি বেয়ে উঠলে এবং সার্বিকভাবে ধুলোবালিতে শ্বাস কষ্ট বৃদ্ধি পেতো।

মানসিক লক্ষণ হিসেবে যেটা জানা যায়:

  • রাগ, উত্তেজনা, সামান্যতেই রেগে যেতেন এবং হৈ চৈ চিৎকার করতেন।
  • স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, কিছুক্ষণ আগে কি করেছেন বা বলেছেন তা ভুলে যেতেন।

এছাড়া:

  • গলার ভেতর ইরিটেশন বা খুশখুশির অনুভূতি।
  • স্বরভংগ, যা ব্যথাহীন বা পেইনলেস।
  • খাওয়ার পর লক্ষণ বৃদ্ধি।
  • তিনি ডিম, দুধ, টক জাতীয় ফল পছন্দ করতেন। মিষ্টি অত্যন্ত পছন্দ। রোজ কিছু না কিছু মিষ্টান্ন খেতেই হতো।
  • পোলাও-বিরানী, ফাস্ট ফুডে লক্ষণ বৃদ্ধি।

২য় সাক্ষাত: ১০ এপ্রিল ২০২১

লার্জ ইম্প্রুভমেন্ট, শ্বাসকষ্টের কিছুটা উপশম

  1. ঘাড়ের দিকে স্কিন ইরাপশন (যা বেশ কবার অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করে দমন করা হয়েছিল)। অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ফলাফল এটি।

৩য় সাক্ষাত: মে ২২, ২০২১

পূর্বের সকল লক্ষণের উপশম

নতুন লক্ষণ হিসেবে এসিডিটি জনিত গলাবুক জ্বালাপোড়া। এটি মূলত: পরিবার ঐ সময়ে সাথে না থাকায় বাইরের খাবার গ্রহণের জন্য। শ্বাসকষ্ট তখন মূলত: ধুলোবালির জন্য মাঝে মধ্যে দেখা দিত।

৪র্থ সাক্ষাত: ১৭ জুলাই ২০২১

পূরাতন লক্ষণের ব্যাপক উপশম। কিছু নতুন লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন:

  1. মাথাব্যথা –  কপাল ও মাথার পিছনের দিকে।
  2. মাথাব্যথার সময় চোখ ব্যথা করত।
  3. অনবরত নাক চুলকাতো এবং আংগুল দিয়ে নাক ঘষতেন।
  4. লোয়ার ব্যাক পেইন (লাম্বাগো) উরু পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

৫ম সাক্ষাত: ২১ আগষ্ট ২০২১

শ্বাসকষ্ট পূর্বের থেকে অনেকটা ভাল। ঐ সময় যা তাকে কষ্ট দিচ্ছিল তা হলো মাথা ব্যথা। যার লক্ষণ ছিল:

  1. দুপুরের আগে মাথা ব্যথা
  2. সাধারণ আলো হতে মাথাব্যথা
  3. শব্দ বা নয়েজ হতে মাথা ব্যথা
  4. মাথার উভয় পার্শ্বে ব্যথা
  5. ঘুমালে মাথাব্যথার উপশম
  6. চোখের মণিতে ব্যথা

এছাড়া –

  • ডাস্ট থেকে মাঝে মধ্যে শ্বাসকষ্ট হতো। তীব্রতা অনেক কম। অন্য ওষুধ বা ইনহেলার নেয়া লাগেনি।
  • দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে কোমর ব্যথা।
  • খাবার পর দুর্বলতা।

রোগলক্ষণ অস্পষ্ট হওয়ায় আরো ২/১ মাস পর রোগীকে আসতে বলি।

৬ষ্ঠ সাক্ষাত: ২৩ অক্টোবর ২০২১

লার্জ ইমপ্রুভমেন্ট

  1. দ্রুত বীর্যপাত (কিছু যৌন দুর্বলতার কথা বলেন) এছাড়া
  2. মানসিক চাপ (মূলত: করোনা-ভীতি ও ঘরে বসে কাজ করার জন্য)
  3. এসিডিটির কারণে গলাবুক জ্বালাপোড়া

৭ম সাক্ষাত: ৪ ডিসেম্বর ২০২১ (২ মাস পর)

আগের থেকে ভাল

  1. মাথাব্যথার সময় মেজাজ খিটখিটে
  2. মানসিক চাপ পূর্বের থেকে কম
  3. নতুন লক্ষণ হিসেবে
  4. মুখের ফুসকুড়ি জাতীয় ক্ষত বা ঘা যাকে আমরা এ্যাপথে বলে থাকি। খাবার সময় মুখে জ্বালা করতো। কিছু দিন পর পর এটা দেখা দিতো।

৮ম সাক্ষাত: ১২ মার্চ ২০২২

  1. নাক দিয়ে ঘুমের ভেতর এবং মুখ ধোবার বা অজু করার সময় বেশ কয়েকবার রক্তপাত হয়েছে।
  2. নাকের ভেতর শুষ্কতার অনুভূতি।
  3. অন্য ডাক্তার দেখান যিনি সাইনোসাইটিসের বিষয়টি কনফার্ম করেন। কিন্তু তার চিকিৎসা না নিয়ে রোগী আমার নিকট আসেন।
  4. মাসে ২/১ দিন শ্বাসকষ্ট। ইনহেলার নিতে হয়নি।

সর্বশেষ ৯ম সাক্ষাত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ (১৮ মাস পর)

এই ১৮ মাসে রোগী বেশ কবার ফোন ও মেসেজে যোগাযোগ করে আপডেট জানান। এই সময়ে তার শ্বাসকষ্ট একবার ও হয়নি। সর্বশেষ তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সাক্ষাত করতে আসেন মূলত: তার মেরুদন্ডের ডিস্ক প্রলাপ্স-এর জন্য। তার কেসটি স্পষ্ট।

  1. ঠান্ডা পানি পানে প্রচুর আগ্রহ
  2. কোমর ব্যথা (ডিস্ক প্রলাপ্সজনিত)
  3. কোমর ব্যথা গরম সেক দিলে উপশম
  4. দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে কোমর ব্যথা
  5. কোমর ব্যথাটি পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে যা পূর্বে উরুতে আসতো। এটি একটি ভাল লক্ষণ কারণ আরোগ্যের গতি অনুযায়ী উদ্ধাংগ হতে নিম্নাংগে লক্ষণ প্রসারিত হলে সেটা অত্যন্ত পজিটিভ।

কেসটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ:

সাধারণ লক্ষণ ওষুধ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণ লক্ষণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, রোগীর কোন খাবার-পানীয় অতিরিক্ত ইচ্ছা বা অনিচ্ছা বা লক্ষণ হ্র্রাস-বৃদ্ধি পায়, তাপমাত্রার পরিবর্তনে লক্ষণের হ্রাস-বৃদ্ধি, কত ঘন ঘন লক্ষণ দেখা দেয়? নির্দিষ্ট সময়/ আবহাওয়া/ ঋতুতে লক্ষণ হ্রাস-বৃদ্ধি ইত্যাদি।

এছাড়া সার্বিকভাবে মানসিক লক্ষণ বিবেচনায় আনলে আমরা রোগীর জন্য ভাল ওষুধ নির্বাচন করতে পারি।

অন্যান্য ওষুধের প্রভাবের কারণে রোগীরা অনেক সময় তাদের লক্ষণাবলী বা কষ্ট স্পষ্টকরে ব্যাখা করতে পারেন না।

এ রোগীটি আমাদের পরামর্শে কষ্ট হলেও প্রথম থেকেই অন্য ওষুধ বর্জন করেছেন। ফলে আমরা দ্রুত তার এ্যাজমা নিরাময়ে সক্ষম হয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। প্রথম থেকেই রোগীর কেসটি ১০০% স্পষ্ট পাইনি। পেলে নিরাময়ে আরো কম সময় লাগতো। তৃতীয় সাক্ষাতে তার কেসটি স্পষ্ট পাওয়া যায় এবং তাকে ব্রোমিয়াম নামক ওষুধ দেয়া হয়। যা অতি দ্রুত ব্যাপক উন্নতি ঘটায় রোগীর শ্বাসকষ্টের। ২ বার ফলোআপে রোগীর কেসটি আমরা অস্পষ্ট পাই। আমরা তখন কোন প্রকার ওষুধ প্রেসক্রাইব করিনি। এরকম অবস্থায় দীর্ঘ সময় গ্যাপ দিয়ে ফলোআপ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

রোগীকে নিরাময়ে আমরা যেসব ওষুধ ব্যবহার করি সেগুলো হলো:

কার্বোভেজ, নেট্রাম সালফ, ব্রোমিয়াম, স্যাবাডিলা, লাইকোপডিয়াম এবং সর্বশেষ ডিস্ক প্রোলাপ্সের জন্য ক্যালি কার্ব। ইনশাল্লাহ্ ডিস্ক প্রোলাপ্স থেকে তিনি দ্রুত নিরাময় লাভ করবেন।