Benign Prostatic Hyperplasia

Prostate Gland Enlargement and its Treatment

প্রোস্টেট গ্লান্ডের বৃদ্ধি বা Benign Prostatic Hyperplasia (BPH) মূলত: বয়ষ্ক পুরুষদের রোগ। রোগীদের ৩০-৪০% মধ্যবয়সী (বয়স ৪০-৬০)। ৫০% আক্রান্তের বয়স ৬০+। কিন্তু চিন্তার কারণ হলো ৫% যুবক এ রোগে আক্রান্ত যাদের বয়স এখনো ৪০ হয়নি। সার্জারি করেও তেমন সুফল মিলছে না। বিকল্প তাহলে কি?

প্রোস্টেট বৃদ্ধির কারণ কি (Causes of BPH)?

  1. বয়স: বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং বয়সের সাথে সাথে এটি ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পায়।
  2. হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন: বিশেষ করে ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন (Dihydrotestosterone or DHT) বৃদ্ধি।
  3. ডায়বেটিস ও হৃদরোগ থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
  4. পারিবারিক ইতিহাস।
  5. যৌনরোগ (STD) পুরোপুরি নিরাময় হলেও প্রস্টেট বৃদ্ধি হয়ে থাকে।
  6. লাইফস্টাইল: সঠিক খাদ্য-পানীয় গ্রহণ না করা, শরীরচর্চা না করা, স্থুলতা, ধুমপান ইত্যাদিতে বিপিএইচে এর ঝুঁকি বাড়ে।

কি দেখে জানবেন প্রোস্টেট বৃদ্ধি পেয়েছে (Causes of BPH):

  1. ঘন ঘন প্রস্রাব বিশেষত: রাতে।
  2. প্রস্রাবের বেগ ধরে রাখা যায়না।  
  3. প্রস্রাবের দুর্বল বা বাঁধাগ্রস্থ ধারা।
  4. প্রস্রাব শুরু ও শেষ করতে অসুবিধা।
  5. প্রস্রাবকালে কোঁথ দিতে হয়।
  6. প্রস্রাব শেষেও ব্লাডার কিছুটা পূর্ণ থাকার অনুভূতি।
  7. ড্রিবলিং: প্রস্রাব শেষ করার পরেও ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হওয়া।
  8. হেমাচুরিয়া: রক্তযুক্ত প্রস্রাব যা মূত্রনালীর সংক্রমণ বা UTI এর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।  

সুচিকিৎসা না হলে কি জটিলতা দিবে?

  1. হঠাৎ প্রস্রাব করতে অক্ষমতা (urinary retention)
  2. মূত্রনালীর সংক্রমণ বা UTI
  3. ব্লাডার স্টোন।
  4. ব্লাডার ও কিডনির ক্ষতি বা ড্যামেজ।

চিকিৎসা:

এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসায় আলফা-ব্লকার জাতীয় ওষুধ প্রোস্টেট এবং মূত্রাশয়ের ঘাড়ের মসৃণ পেশীগুলিকে শিথিল করে, যা প্রস্রাবের প্রবাহকে উন্নত করতে এবং প্রস্রাবের ফ্রিকোয়েন্সি, হঠাৎ প্রস্রাব, ক্ষীণ প্রবাহ এবং প্রস্রাব শুরু করতে অসুবিধার মতো লক্ষণসমূহ কমাতে পারে। তবে এসব ওষুধ ছেড়ে দিলে রোগীর কষ্ট পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।

এছাড়া 5-আলফা-রিডাক্টেস ইনহিবিটর ব্যবহার করা হয়। যার কাজ প্রোস্টেট গ্লান্ডের আকার ছোট করা।

কিন্তু এ জাতীয় ওষুধের অনেক সাইড ইফেক্ট। যেমন –

  1. ইরেক্টাইল ডিসফাংশন।
  2. বীর্যপাতের পরিমাণ হ্রাস পাওয়া।
  3. বিপরীতমুখী বীর্যপাত হয়ে ব্লাডারে প্রবেশ করতে পারে।
  4. লো-লিবিডো – যৌনাকাংখা হ্রাস পাওয়া।
  5. স্তনের কোমলতা এবং বৃদ্ধি (Gynecomastia)।
  6. মেজাজ পরিবর্তন তথা বিষণ্নতা বা উদ্বেগ দেখা দেয়।
  7. টেস্টিকুলার পেইন বা অন্ডকোষে অস্বস্তি বা ব্যথা।
  8. অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া: ফুসকুড়ি, চুলকানি, ত্বকের ফোলাভাব, তীব্র মাথা ঘোরা ও শ্বাসকষ্ট উল্লেখযোগ্য।  
  9. হাইপোটেনশন বা লো-ব্লাড প্রেসার। 
  10. ব্লাডারের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অসাড়ে প্রস্রাব।

ওষুধ বন্ধ করামাত্রই রোগী পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়।

তাহলে সার্জারিই কি সমাধান? লেজার সার্জারি (যেমন, গ্রীনলাইট লেজার থেরাপি) এবং ওপেন প্রোস্টেটেক্টমি দ্বারা রোগীর কষ্ট উপশমের জন্য প্রোস্টেটের আকার ছোট বা হ্রাস করা হয়। আমরা বহু সার্জারি করা রোগীর কথা হতে সার্জারির ব্যর্থতার প্রমাণ পাই।

হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার:

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগীর সার্বিক লক্ষণ ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বিশ্লেষণ করে চিকিৎসা দেয়া হয়।  

প্রস্ট্রেট এনলার্জমেন্টের ৫৪ টি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ রয়েছে। আর বয়ষ্কদের এনলার্জমেন্টের জন্য রয়েছে বিশেষ ১২ টি ওষুধ। যার অন্যতম ৫টি ওষুধ নিয়ে আজ আলোচনা করবো।

  1. Baryta carb: বৃদ্ধ মানুষের প্রস্টেট বৃদ্ধি সহ অনেক রোগে বহুল ব্যবহৃত ওষুধ। এরা শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল। ব্যারাইটার রোগীদের আত্মবিশ্বাসের মারাত্মক ঘাটতি থাকে। শারীরিক-মানসিক ক্ষেত্রে অপরিপক্কতা বা Immaturity দেখা যায়। তারা অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকে। অন্যের প্রোটেকশনের দরকার হয় এদের। স্মৃতিশক্তির দুর্বলতাও থাকে।
  2. Conium Maculatum: অধিকাংশ ক্ষেত্রে এদের রোগের মূল কারণ যৌনাকাংখা দমন করা। এদের রোগ ধীরে ধীরে দেখা দেয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে শক্ত টিউমার সৃষ্টি হয়। অনেকের মাথাঘোরার সমস্যা থাকে। লেখাপড়া, চাকুরি, ব্যবসা পরিচালনা সহ মানসিক কাজে অনীহা। প্রস্টেট বৃদ্ধি পেলে তা শক্ত হয়ে ফুলে উঠে। প্রস্রাব বাধাগ্রস্থ হয়। প্রস্রাবের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে অনেকে দাড়িয়ে প্রস্রাব করে।
  3. Digitalis purpurea: হার্টের কার্যকারিতা অস্বাভাবিক স্লো অর্থাৎ যারা Bradycardia – য় ভুগছেন তাদের মূল ওষুধ।  বহুদিন ধরে প্রস্টেট বৃদ্ধিতে ভুগতে থাকলে তাদের জন্য ব্যবহৃত হয়। স্বাভাবিকভাবে মূত্রত্যাগ করতে অসুবিধা। অবিবাহিত বয়ষ্ক রোগী বা বৃদ্ধ রোগীর জন্য ডিজিটালিস উত্তম ওষুধ। এটি প্রস্টেটের আকার কমাতে সহায়তা করে। দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাবের বেগ চেপে রাখলে এক পর্যায়ে ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব গড়িয়ে পড়ে।
  4. Selenium: নপুংসক, প্রস্টেটের সমস্যা, মলত্যাগের সময় বীর্যপাতের প্রধান ওষুধ সেলেনিয়াম। এরা সাধারণত: মানসিক অবসাদ ও নৈরাশ্যে ভুগেন। বিশেষ করে বৃদ্ধদের প্রস্টেট গ্লান্ড বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হয়। প্রস্টেটের প্রদাহ সহ এর টিস্যু শক্ত হয়ে যায়। যাকে আমরা ক্যালসিফিকেশন বলি। পায়খানা বা প্রস্রাব করার মুহুর্তে প্রস্রাব গড়িয়ে পড়ে। এছাড়া মলত্যাগের সময়, হাটাহাটি করলে, এমনকি বসে থাকলে বা ঘুমের ভেতরও অসাড়ে বীর্যপাত হয়। এসব রোগীদের অনেকেই অকাল বৃদ্ধ।
  5. Thuja occidentalis: রোগীর সবকিছুতে গোপনীয়তা রক্ষা করার প্রবণতা থাকে। এদের শরীরে নানান রকম অস্বাভাবিক গ্রোথ তথা টিউমার, সিস্ট দেখা যায়। এরা সাধারণত: রিজার্ভড প্রকৃতির। কথা কম বলে। মনে করে তাদের শরীর ভংগুর, কাঁচ দিয়ে নির্মিত। পেটে জীবন্ত কিছু নড়াচড়ার অনুভূতি থাকে অনেকের। আরেকটি মজার লক্ষণ হলো – তারা মনে করে যে, তাদের আত্মা শরীর হতে বিচ্ছিন্ন। সাধারণত: গণোরিয়া চাঁপা পড়ে প্রস্টেটের সমস্যা দেখা দিলে থুজা অধিক কার্যকর। একাধিক ধারায় প্রস্রাব হয়। উপর থেকে পড়ে যাবার স্বপ্ন দেখে অনেকেই।

শেষ করার আগে কিছু পরামর্শ: জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন। যেমন –

  1. অধিক ক্যাফেইন কখনো স্বাস্থ্যকর নয়। কফিপান হ্রাস করুন বা পরিত্যাগ করুন।।
  2. ধুমপান করে থাকলে তা পুরোপুরি বর্জন করুন।
  3.  ঘুমানোর আগে অধিক পানি পান করবেন না।
  4.  নিয়মিত-পরিমিত ব্যায়াম করুন।
  5. তলপেটের কিছু ব্যায়াম প্রস্টেটের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
  6. প্রস্রাবের বেগ কখনো চেপে রাখবেন না।

By drbenojirbd

Dr. Benojir is Director at Bangladesh Public Administration Training Center. He is practicing Classing Homeopathy. He is trained by the world's best Homeopath Prof. George Vithoulkas and eminent Indian Homeopath Farokh J Master, MD, PhD. Dr. Benojir is practicing classical homeopathy since last 25 years. He consult patient in-person and online.

Need Help?

Discover more from Dr. Benojir

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading