Treatment of dengue

Easy treatment of Dengue Fever

ডেঙ্গু জ্বর একটি অত্যন্ত সাধারণ ভেক্টর-বাহিত ভাইরাসঘটিত রোগ। বিনা চিকিৎসায়, ভুল চিকিৎসায় এবং দেরিতে চিকিৎসার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। অথচ ডেঙ্গুর রয়েছে সহজ হোমিও নিরাময়।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে প্রথমবার ডেঙ্গু-তে আক্রান্ত রোগীর বিশেষ কোন উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যায় না। ডেঙ্গুর সাধারণ উপসর্গ গুলি হলো –

  1. উচ্চ জ্বর কমবেশী ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট
  2. তীব্র মাথাব্যথা
  3. চোখের পিছনে ব্যথা 
  4. পেশি ও জয়েন্টে ব্যথা 
  5. বমি বমি ভাব ও বমি
  6. গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
  7. মাথাঘোরা
  8. ত্বকে ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ

এই উপসর্গ গুলি রোগ সংক্রমণের ৪-১০ দিনের মধ্যে দেখা দেয়। সাধারণত ২-৭ দিন পর্যন্ত লক্ষণ স্থায়ী হতে পারে।

ডেঙ্গুর গুরুতর লক্ষণ হলো:  

  1. তীব্র পেটে ব্যথা
  2. অবিরাম বমি হওয়া
  3. দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস
  4. মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত
  5. ক্লান্তি
  6. অস্থিরতা
  7. রক্তযুক্ত বমি বা মল
  8. তীব্র তৃষ্ণা
  9. ফ্যাকাশে ও ঠান্ডা ত্বক

ডেঙ্গুতে প্লেটলেট ইস্যু:

সুস্থ ও প্রাপ্ত বয়স্ক একজন মানুষের প্লেটলেট সংখ্যা হয় ১৫০,০০০-৪৫০,০০০/প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে। উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ডেঙ্গু-আক্রান্ত রোগীদের এই সংখ্যা ২০০০ – এর নিচে আসতে দেখা যায়। এ সময় রক্তপাতের ঝুঁকি সর্বোচ্চ হয়। প্লেটলেট কাউন্ট কম এবং রক্তক্ষরণের লক্ষণ প্রকাশ পেলে প্লেটলেট প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়।

ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা:

ডেঙ্গুর চিকিৎসার বিশেষ কোন ওষুধ বা প্রতিষেধক এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকরা পেরাসিটামিল জাতীয় ওষুধ দিয়ে যন্ত্রণা এবং জ্বরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রদাহ-প্রতিরোধী ওষুধ দিয়ে রক্ত ক্ষরণের সম্ভাবনা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। লক্ষণ তীব্র হলে পানি-লবনের ভারসাম্য রক্ষার্থে ডেঙ্গু রোগীদের শিরায় ইলেক্ট্রোলাইট তরল দেওয়া হয়। প্রয়োজনে প্লেটলেট প্রতিস্থাপন করা হয়।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় লক্ষণ সাদৃশ্যে যে কোন ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। সর্বাধিক ব্যবহৃত ওষুধগুলির মধ্যে আছে: Bryonia alba, Carica Papaya, Eupatorium perfoliatum, Rhus Toxicodendron, Gelsemium, Aconitum napellus, China, Hamamelis, Colocynthis, Crotalus horridus, Phosphorus ইত্যাদি। তবে রোগীর লক্ষণের সাথে ওষুধের লক্ষণ সদৃশ হতে হবে।

বহুল ব্যবহৃত ৫ টি ওষুধের লক্ষণ:

1. হাড় ভাঙ্গা ব্যথা সহ ডেঙ্গু জ্বরের জন্য Eupatorium Perfoliatum

Eupatorium perfoliatum ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ওষুধ। কারণ এই ওষুধের লক্ষণগুলি প্রায় সম্পূর্ণরূপে ডেঙ্গু জ্বরের সদৃশ হয়ে থাকে। ঠিক এই কারণেই এই ওষুধটিকে ‘বোন সেট (Bone set)’ বলা হয়।  কারণ এটি ডেঙ্গু জ্বরের ভয়ানক হাড়ের ব্যথা উপশম করতে সক্ষম। এটিতে গভীর হাড়ের ব্যথা রয়েছে যা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। উচ্চ জ্বর সহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং পেশীতে তীব্র ব্যথা থাকে।

মাথায় সাধারণত থরথর করে ব্যথা হয় (throbbing pain) । রোগীর মাথার পিছনের অংশে এবং মাথার উপরের অংশেও ব্যথা হয়। চোখে বা চোখের মণিতে ব্যথা থাকে।

2. ব্রায়োনিয়া – তীব্র তৃষ্ণার সাথে ডেঙ্গু জ্বরের হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার।

এই ওষুধটিতে উচ্চ জ্বর সহ পুরো শরীরে এবং হাত-পায়ে ব্যথা করে। ব্যথা সাধারণত সুঁচ ফোটানো মত এবং ছিঁড়ে ফেলার ন্যায়। এই ওষুধের দুটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল তীব্র তৃষ্ণা এবং চলাফেরায় কষ্ট বৃদ্ধি বিশেষত বেদনা বৃদ্ধি।

প্রকৃতপক্ষে, যে কোনো ধরনের চলাফেরা শরীর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যথাকে বাড়িয়ে দেয়। রোগী যখনই হাঁটতে বা নড়াচড়া করার চেষ্টা করে বা বিছানায় ঘুরতে থাকে, তখন ব্যথা ও কষ্ট অসহনীয় হয়ে ওঠে। তিনি বিশ্রামের সময় ভাল বোধ করেন এবং নড়াচড়া করতে চান না। মুখ, জিহ্বা এবং অন্যান্য শ্লেষ্মা ঝিল্লির এত বেশি শুষ্কতা যে রোগী প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে চায় এবং একবারে প্রচুর পরিমাণে পান করে। মুখের স্বাদ তেতো।

3. ফসফরাস – রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গু জ্বরের জন্য হোমিওপ্যাথিক ওষুধ

রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গু জ্বরের জন্য এটি অন্যতম হোমিওপ্যাথিক ওষুধ। হাত, বাহু ও পায়ে জ্বালাপোড়া এবং অসাড়তা থাকে। জ্বরের সাথে তীব্র তৃষ্ণা লাগে। তৃষ্ণা এত বেশি যে রোগী ঠাণ্ডা পানি পান করতে চায়। শরীরের যেকোন অংশ বা ছিদ্র থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। রোগী অস্বাভাবিকভাবে ক্ষুধার্ত বোধ করতে পারে।

4. Rhus Tox – নড়াচড়ায় ব্যথার উপশমের জন্য সেরা হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার। এটা ব্রায়োনিয়ার বিপরীত লক্ষণবিশিষ্ট।

Rhus tox হল ডেঙ্গুর জন্য সর্বোত্তম হোমিওপ্যাথিক ওষুধ যখন শরীরে পেশীতে ঘা এবং যন্ত্রণা কেবল গতিশীল অবস্থাতেই  ভালো অনুভূত হয়। রোগী বিশ্রাম করতে পারে না কারণ এটি তার কষ্ট বাড়ায়। জিহ্বার সাদা আবরণ। জিহ্বার ডগা লাল থাকে এবং ডগায় লাল ত্রিভুজ আকৃতি দেখা যায়।

5. ক্যারিকা পেঁপে- প্লেটলেট কাউন্ট উন্নত করার জন্য হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার

Carica Papaya হল একটি হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার যা আমরা পেঁপে ফল থেকে পাই। ওষুধ তৈরি করতে পেঁপের বীজ ব্যবহার করা হয়। এটি যে সব রোগীর প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যাচ্ছে তাদের প্লেটলেটের সংখ্যা দ্রুত বাড়াতে সহায়তা করে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ:

  1. জমা পানিতে মশারা বংশবিস্তার করে। পানি জমতে না দিলেই মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গাছের টব, ফুলদানি, পরিত্যক্ত গাড়ির টায়ারের জমে থাকা পানি ফেলে দিন। 
  2. লম্বা-হাতা পোশাক বা শার্ট, লম্বা প্যান্ট, মোজা এবং জুতা পরুন।
  3. ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা দিনের বেলায় সবচেয়ে বেশি সক্রিয়ে থাকে। তখন সতর্ক থাকুন।
  4. রাতে শোবার সময় মশারী ব্যবহার করুন। 

ডেঙ্গু সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা জরুরি। কে কি করলো তা না ভেবে আপনি ও আপনার পরিবার কিভাবে মশা নিধন করতে পারেন সেদিকে মনোনিবেশ করুন।

আক্রান্ত হয়ে গেলে করণীয়:

  1. প্রচুর পানি পান করুন। সম্ভব হলে ডাবের পানি পান করুন।
  2. আইবুপ্রোফেন এবং এ্যাসপিরিণের মত নন-স্টেরয়েডাল এ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ এড়িয়ে চলুন।
  3. গুরুতর অবস্থায় যেখানে রোগীকে আইভি স্যালাইন বা প্লেটলেট দেয়া লাগে সেক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করান। সঠিক হোমিও চিকিৎসা নিলে রোগী এ পর্যায়ে যাবেন না।
  4. ভিটামিন – সি জাতীয় ফল খাওয়ান।
  5. সহজপাচ্য ও আশযুক্ত খাদ্য দিন।

মনে রাখবেন:

  1. ডেঙ্গুর কোন পরীক্ষিত ভ্যাক্সিন এখনো তৈরী হয়নি।
  2. প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য মশা নিধনই একমাত্র উপায়।

By drbenojirbd

Dr. Benojir is Director at Bangladesh Public Administration Training Center. He is practicing Classing Homeopathy. He is trained by the world's best Homeopath Prof. George Vithoulkas and eminent Indian Homeopath Farokh J Master, MD, PhD. Dr. Benojir is practicing classical homeopathy since last 25 years. He consult patient in-person and online.

Need Help?

Discover more from Dr. Benojir

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading