মেনোপজ একজন নারীর জীবনের একটি স্বাভাবিক এবং অনিবার্য পর্যায়। মেনোপজকালীন নারী আর গর্ভধারণ করতে পারেন না। সাধারণত বয়স ৫০ বছরের কিছু আগে-পরে মেনোপজ ঘটে। মেনোপজ একটি জটিল জৈবিক প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক আবেগিক এবং হরমোনের পরিবর্তনের সাথে যুক্ত। মেনোপজ, পোষ্টমেনোপজ এর জটিলতা কি তা বোঝা নারী এবং তাদের পরিবারের সকলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
টানা ১২ মাস কারো ঋতুস্রাব না হলেই মেনোপজ নিশ্চিত করা হয়। মেনোপজের প্রাথমিক কারণ হল ডিম্বাশয় দ্বারা উত্পাদিত প্রজনন হরমোন, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের স্বাভাবিক হ্রাস।
কারো কারো ক্ষেত্রে জীবনের এই রূপান্তরকালীন ন্যূনতম লক্ষণগুলি দেখা দেয়। কারো ক্ষেত্রে স্পষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। জীবনযাত্রার ধরণ, জেনেটিক্স, এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য মেনোপজ ট্রানজিশনের প্রতিটি পর্যায়ে ভূমিকা পালন করে।
লক্ষণ:
- হট ফ্ল্যাশ: হঠাৎ, তীব্র তাপের তরঙ্গ, প্রায়শই ঘাম এবং দ্রুত হার্টবিট সহ হট ফ্লাশ দেখা দেয়।
- রাতের ঘাম: ঘুমের সময় হট ফ্ল্যাশ দেখা দেয়, যা অতিরিক্ত ঘাম এবং সম্ভাব্য ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
- মেজাজের পরিবর্তন: মেজাজের ওঠানামা, খিটখিটে, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা সহ।
- ঘুমের ব্যাঘাত: অনিদ্রা বা ঘুমের ধরণ ব্যাহত, ক্লান্তিতে অবদান রাখে এবং সামগ্রিক সুস্থতা হ্রাস পায়।
- যোনি শুষ্কতা: যোনির দেয়াল পাতলা এবং প্রদাহ, সহবাসের সময় অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
- হাড় ক্ষয়: হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস, অস্টিওপরোসিস এবং ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- জ্ঞানীয় পরিবর্তন: কিছু মহিলার স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং মনোযোগ দিতে অসুবিধা হতে পারে।
এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা:
হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরটি) হল একটি চিকিৎসা যা সাধারণত মহিলাদের মধ্যে ইস্ট্রোজেনের ক্রমহ্রাসমান মাত্রা এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রজেস্টেরনের পরিপূরক করে মেনোপজের লক্ষণগুলি উপশম করার জন্য দেয়া হয়ে থাকে। তবে হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপির কিছু মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে:
- স্তনের সংবেদনশীলতা ও নানান সমস্যা।
- শরীরে পানি জমা।
- মাথাব্যথা।
- মাথাঘোরা।
- বমি বমি ভাব।
- মেজাজের পরিবর্তনশীলতা।
- ওজন বৃদ্ধি।
- অনিয়মিত রক্তপাত।
- পিত্তথলির সমস্যা।
- বর্ধিত রক্তচাপ।
- রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বৃদ্ধি।
- স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি।
- এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি।
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা: নিয়মিত ব্যায়াম, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ একটি সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানিপান লক্ষণগুলি উপশম করতে এবং সামগ্রিক সুস্থতাকে অনেকাশে সহায়তা করে।
হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার:
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা হলিস্টিক। যা ব্যক্তিকে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করে অর্থাৎ শারীরিক, মানসিক এবং আবেগিক দিক বিশ্লেষণ করেই চিকিৎসা দান করে। হোমিওপ্যাথিতে প্রায় ১০০ টির অধিক ওষুধ রয়েছে।
হট ফ্ল্যাশ, রাতের ঘাম, মেজাজের পরিবর্তন, বিরক্তি, অনিদ্রা এবং ঘুমের ব্যাঘাত, যোনি শুষ্কতা এবং মেনোপজ অ্যাট্রোফি, দু:শ্চিন্তা, ভয়, ডিপ্রেশন, জরায়ুর প্রলাপ্স, মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, চুল পড়ে যাওয়া, পাইল্স, পালপিটেশন, নাক দিয়ে রক্তপাত, খাবারে অতিরিক্ত রুচি বা অরুচি, লিউকোরিয়া, ডায়রিয়া, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য সহ সার্বিক লক্ষণ বিশ্লেষণ করে রোগীকে যে কোন ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। উল্লেখযোগ্য ওষুধ সমূহ হলো:
এ্যাগারিকাস, এপিস, ক্রোকাস ক্যাসকাভেলা, কোনিয়াম, গ্রাফাইটিস, ইগনেশিয়া, ল্যাকেসিস, মুরেক্স, নেট্রাম মিউর, নাক্স ভমিকা, সোরিনাম, পালসেটিলা, স্যাংগুনেরিয়া, সিপিয়া, সালফার।