Healthy lifestyle!

সুস্থতা মানুষের দুনিয়াবি জীবনের বড় নিয়ামতগুলোর ভেতর অন্যতম। সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন জীবনে আনে ছন্দ, অনাবিল প্রশান্তি আর গতি। অন্যদিকে অসুস্থতা মানুষের সমস্ত অর্থবিত্ত, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তিকে ম্লান করে দেয়। ইসলাম এজন্যই সুস্থতাকে অত্যধিক গুরুত্ব দান করেছে। সর্বকালের শীর্ষ মানব মহানবি রাসুল (সাঃ) বলেন, ”আল্লাহর নিকট একজন সুস্থ-সবল মুমিন দুর্বল মুমিন অপেক্ষা অধিকতর প্রিয় ও উত্তম।” (মুসলিম : ৬৯৪৫)

একজন সুস্থ-সবল মুমিন যথাযথ হকের সাথে আল্লাহর ইবাদত পালনে অধিক সমর্থ হন। পাশাপাশি মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে, পারেন অন্যের সাহায্য পাশে দাঁড়াতে। প্রয়োজনে কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতেও পিছপা হননা তিনি। তাই আল্লাহর প্রিয়ভাজন ও নিকটতর হওয়ার জন্য হলেও নিজের সার্বিক সুস্থতা ও ফিটনেস সম্পর্কে প্রতিটি মানুষের বিশেষত: মুমিনের সচেতন হওয়া একান্ত আবশ্যক। তাছাড়া নিজের সুস্থতা ও ফিটনেসের প্রতি যত্নবান হওয়া মুমিনদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যও বটে। সকল নবি-রাসুলই সুস্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান ছিলেন। প্রত্যেকেই ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী এক কর্মবীর। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মরুভূমিতে মেষ চরাতেন, ব্যবসা-বানিজ্য করতেন দূর-দুরান্তে। নবুয়তের পূর্বে নিভৃতে ধ্যান করার উদ্দেশ্যে হাইকিং করে উঠেছেন ৬৩৪ মিটার উঁচু জাবালে নুর পর্বতের গুহায়। বাস্তব জীবনে উট, গাধা, ঘোড়া ইত্যাদি বাহনে চড়েছেন। নিজেই যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন, সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন জিহাদের ময়দানে। এ ছাড়া তিনি প্রায়ই মদিনার বাজার পরিদর্শনে যেতেন, অসুস্থদের দেখেন যেতেন, নিয়মিত মদিনা হেঁটে হেঁটে চলে যেতেন কুবা পর্যন্ত। ছাগলের দুধ দোহন থেকে শুরু করে নিজের জুতা-জামা সেলাই পর্যন্ত যাবতীয় সাংসারিক কাজে তিনি সাগ্রহে অংশ নিতেন। সর্বোপরি একটি কর্মচঞ্চল, গতিশীল ও ভারসাম্যপূ্র্ণ জীবনযাপন করেছেন বিশ্বনবি মুহাম্মাদ (সাঃ)।

প্রশ্ন উঠতে পারে কেন আমরা বার বার মহানবি (সাঃ) এর প্রসংগ তুলছি হেলদি লাইফস্টাইল আলোচনা করতে গিয়ে! কারণ, তিনি ছিলেন শরীর-মন-আধ্যাত্মিকতা সকল দিক দিয়ে সুস্থ মানবের এক মহান আদর্শ। কি কিভাবে নিজের যত্ন নিতেন তা আমাদের নিকট অবশ্যই অনুকরণীয়। আধুনিক বিজ্ঞান ও মেডিকেল সাইন্স তাঁর জীবনের সকল পর্যায়ের সাথে তার স্বাস্থ্যগত দিকও নানান ভাবে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে। প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনের নানান বৈজ্ঞানিক দিক। নবিজি (সাঃ) এর খাওয়া, শারীরিক পরিশ্রম, ঘুম, জীবনাচরণ, আমল-ইবাদত, পারিবারিক সম্পর্ক আমাদের নিকট পরম আকর্ষণীয়।

সুস্থতা নামক নিয়ামত একদিনে অর্জিত হয়না। এটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিলে তিলে অর্জিত হওয়ার বিষয়। এর জন্য চাই পরিকল্পিত উপায়ে নিয়মিত শরীর, মন ও আত্মার পরিচর্যা এবং নিয়মমাফিক জীবনযাপন। কিন্তু মানুষমাত্রই নিয়মের প্রতি উদাসীন। তারা যাচ্ছেতাই চলতেই পছন্দ করে। এ কারণে নিজের অজান্তেই মানুষ ধীরে ধীরে নিজের সুস্থতাকে দুর্ভেদ্য খাঁচায় বন্দি করে ফেলে। পরে যখন অসুস্থতা তার সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যায়, তখন বুঝতে পারে – কি নিয়ামত এতদিন সে উপেক্ষা করে এসেছে। আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, প্রিয়নবি (সাঃ) ইরশাদ করেন, ”অধিকাংশ মানুষ আল্লাহ তায়ালার দুটি বিশেষ নিয়ামতের প্রতি উদাসীন। একটি স্বাস্থ্য, অপরটি তার অবসর।” (বুখারি : ৬৪১২)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সুস্থতার জন্য একই সাথে শরীর ও আত্মাকেও সমান গুরুত্ব দিতেন। এ দুইয়ের মাঝে সমন্বয়ের জন্য তিনি অনুসরণ করতেন নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম ও পদ্ধতি। পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ঘুম, শারীরিক পরিশ্রম, বিনোদন, পরিবার ও আত্মীয়দের সময় দান, ইবাদত, জিকির, রোজা, দীর্ঘক্ষণ নামাজে মগ্ন থাকা ইত্যাদি ছিল তাঁর সুস্থ ও সাবলীল জীবনের প্রধান নিয়ামক। মনুষ্য বৈশিষ্ট্যানুযায়ী কখনো অসুস্থ হলে তিনি যথাযথ চিকিৎসা গ্রহন করতেও দ্বিধা করতেন না। বলতেন- ”হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো। কেননা, মহান আল্লাহ এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধক তিনি দেননি। তবে একটি রোগ আছে, যার কোন প্রতিষেধক নেই। আর তা হলো – বার্ধক্য” (ইবনে মাজাহ : ৩৪৩৬)

By drbenojirbd

Dr. Benojir is Director at Bangladesh Public Administration Training Center. He is practicing Classing Homeopathy. He is trained by the world's best Homeopath Prof. George Vithoulkas and eminent Indian Homeopath Farokh J Master, MD, PhD. Dr. Benojir is practicing classical homeopathy since last 25 years. He consult patient in-person and online.

Need Help?

Discover more from Dr. Benojir

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading