Treatment of Ulcerative Colitis

আলসারেটিভ কোলাইটি এক ধরণের ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (Inflamatory bowel disease) যাতে অন্ত্রের আস্তরণ ফুলে যায়। ফলত: দীর্ঘক্ষণ ধরে পাচনতন্ত্রের মধ্যে যন্ত্রণা হয়। এছাড়া পাঁচনতন্ত্রে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। আলসারেটিভ কোলাইটিস সাধারণত বৃহৎ অন্ত্রের নীচের অংশ যা কোলন নামে পরিচিত সেটা এবং মলদ্বারকে প্রভাবিত করে। এর লক্ষণসমূহ ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয়। কিছু ক্ষেত্রে আলসারেটিভ কোলাইটিস ক্যান্সার সহ গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

সকল বয়সের মানুষের এ রোগ হতে পারে। তবে সাধারণত ৫০ বছরের অধিক পুরুষের এরোগ অধিক হয়।

যে সকল কারণে আলসারেটিভ কোলাইটিসের রোগ হতে পারে বা এর ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে তা হলো:

  1. ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা: দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের মানুষদের আলসারেটিভ কোলাইটিস সহ অন্য যে কোন রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে বেশী।
  2. ব্রণের চিকিৎসা: এ চিকিৎসায় এ্যালোপ্যাথিক যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় তা আলসারেটিভ কোলাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
  3. এনএসএআইডিএস (NSAIDS) আইবুপ্রোফেনের মতো নির্দিষ্ট ওষুধ ঘন ঘন ব্যবহারে আলসারেটিভ কোলাইটিসের সম্ভাবনা বাড়ায়।
  4. বয়স, জাতি, পারিবারিক ইতিহাস: ১৫-৫০ বছরের মধ্যে যে কারো এ রোগের সম্ভাবনা থাকলেও ৫০ উর্দ্ধ বয়সের মানুষের এরোগ অধিক হয়। ইহুদিদের এবং শ্বেতাংগদের এ রোগের ঝুঁকি অধিক। এছাড়া পিতা-মাতা, ভাইবোনের এ রোগ হয়ে থাকলে এ রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশী।
  5. বিশৃংখল জীবনযাত্রা: জীবনযাত্রার বিশৃংখলা অন্য যে কোন রোগের মত আলসারেটিভ কোলাইটিসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

আলসারেটিভ কোলাইটিসের লক্ষণ:

  1. ডায়রিয়া। ঘন ঘন মলত্যাগ।
  2. ক্লান্তিভাব।
  3. বমি বমি ভাব বা বমি।
  4. ওজন হ্রাস পাওয়া।
  5. মলের সাথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রক্তশুন্যতা।
  6. পেটের নিচের অংশ এবং মলদ্বারে ব্যথা।
  7. মলদ্বার হতে রক্তপাতের ফলে মলের সাথে অল্প পরিমাণ রক্ত দেখা যায়।
  8. জ্বর সহ পেট ব্যথা, পেটে খিঁচুনি।
  9. কখনো বা ঘন ঘন মলবেগ থাকা সত্ত্বেও মলত্যাগ করতে না পারা (ineffectual urge)।
  10. মলের মধ্যে পুঁজ, শ্লেষ্মা বা রক্তের উপস্থিতি।
  11. ত্বকে ফুসকুড়ি। মুখে ঘা/ক্ষত।
  12. জয়েন্টে ব্যথা ও ফোলা।
  13. বেদনাসহ চোখ লাল হয়ে যায়।
  14. লিভারের নানান রোগ।
  15. শিশুদের স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি হয়না।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি:

যখন রোগীর মলের সাথে অতিরিক্ত রক্ত যায়, পেটে তীব্র ব্যথা ও খিঁচুনি থাকে, দীর্ঘস্থায়ী অনিন্ত্রিত ডায়রিয়া ইত্যাদি দেখা দেয়, মারাত্মক ডায়রিয়া যা রোগীর ঘুমকে ব্যাহত করে এবং ২/৩ দিনের অধিক জ্বর হলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়।

রক্ত-মল পরীক্ষা, কলোনোস্কাপি, সিটিস্ক্যান বা এক্স-রে ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে আলসারেটিভ কোলাইটিস আছে কিনা নিশ্চিত আছে কিনা নিশ্চিত করা যায়। এ রোগের সাথে পাইলস্ এর যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে। তাই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ সহ সঠিক পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

জটিলতা:

  1. তীব্র রক্তপাত রক্তশুন্যতার দিকে নিয়ে যায়।
  2. মারাত্মক ডিহাইড্রেশন যা জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।
  3. ছিদ্রযুক্ত কোলন – বা কোলনের ভেতর সৃষ্ট গর্ত মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করে।
  4. অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয়।
  5. জয়েন্টগুলিতে মারাত্মক ফোলাভাব, ত্বক ও চোখ লাল বর্ণ ধারণ করা।
  6. কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
  7. শরীরের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা:

ডাক্তার মেসালামাইন, সালফাসালাজিন, বালসালাজাইড, এ্যামিনোসালিসাইলেটস, ওলসালাজিন ইত্যাদি ওষুধ প্রেসক্রাইব করে থাকেন। উদ্দ্যেশ্য প্রদাহ ও ফোলাভাব কমিয়ে লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা। গুরুতর অবস্থায় এ্যান্টিবায়োটিক সহ ইমিউনো-মডুলেটর যেমন – মেথোটেক্সেট, এ্যাজাথিওপ্রিন বা মারকাপটোপুরিন ইত্যাদির  ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে জীবন হুমকির সম্মুখিন হলে বিশেষত: বৃহৎ অন্ত্রে ছিদ্র বা মারাত্মক অবরোধের ক্ষেত্রে ডাক্তার অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কখনো কেবল একটি রোগের নামে দেয়া হয়না। বরং রোগীর সার্বিক রোগলক্ষণ, শারীরিক-মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রদান করা হয়। এ চিকিৎসার উদ্দ্যেশ্য রোগীর সাময়কি উপশম বা লক্ষণের দমন নয় বরং স্থায়ী আরোগ্য। কিভাবে এ রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা দেয়া হয় তা জানতে নিম্নের কেসটি সহায়ক হবে:

রক্তাক্ত মল ও পেটে ব্যথার লক্ষণ নিয়ে ৪০ বছর বয়সী একজন রোগী আসেন। যিনি ১০ বছর ধরে এ সমস্যায় ভুগছিলেন। আধুনিক চিকিৎসার বিফল হয়ে রোগী হোমিও চিকিৎসা নিতে আসেন। বিস্তারিত কেস টেকিং ও রেপার্টোরাইজেশনের পরে রোগীকে হাইড্রাসটিস নিম্ন মাত্রায় দেয়া হয়। ধীরে ধীরে তার প্রতিক্রিয়া অনুসারে উচ্চশক্তি প্রয়োগ করে তাকে আরোগ্য করা হয়।

  1. Mind – sadness, mental depression
  2. Mouth – discoloration – tongue – yellow – white
  3. Stomach – emptiness (week feeling, fainting, goneness, hunger feeling)
  4. Stomach – indigestion (dyspepsia)
  5. Abdomen – flatulence
  6. Abdomen – pain – cramping, griping – flatus amel.
  7. Rectum – diarrhoea – morning
  8. Rectum – pain -burning – stool during
  9. Stool – bloody
  10. Generalities – food and drinks – eggs – desire
  11. Generalities – lassitude
  12. Generalities – tobacco – agg.

কেস বিশ্লেষণ:

সামগ্রিক উপসর্গ বিশ্লেষণ করার জন্য রোগীর চারিত্রিক, মানসিক ও শারীরিক সাধারণ ও বিশেষ লক্ষণসমূহ বিবেচনা করা হয়। মানসিক বিষণ্নতা, তামাক হতে উদ্বেগ, বদহজম, পেট ফাঁপা, ডিম খেতে আকাংখা, সকালে ডায়রিয়া গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ লক্ষণ। পেটে শুন্যতাবোধ, তলপেটে ব্যথা, মলদ্বারে জ্বালাপোড়া, জিভের হলদেটে সাদা বিবর্ণতা, রক্তাক্ত মল ইত্যাদি সার্বিক অবস্থার পরিচায়ক।

হোমিওপ্যাথি ব্যক্তিকে সামগ্রিকভাবে চিকিৎসা করে; এটা রোগকে ধ্বংস করে রোগীর উত্তেজক, মৌলিক কারণগুলিকে (exciting & fundamental causes) দূর করে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মানসিক, সাধারণ শারীরিক লক্ষণ কোন কিছুকেই এড়িয়ে যাওয়া হয়নি। রেপার্টোরাইজেশনের পরে অনেক ওষুধ কাছাকাছি পাওয়া গেলেও হাইড্রাসটিস, আর্সেনিক এ্যালবাম, সালফার, লাইকোপডিয়াম, ক্যাল্কেরিয়া কার্ব ইত্যাদি ওষুধ নিকটতম সম্বন্ধযুক্ত ছিল। এ সকল ওষুধ নিবিড়ভাবে স্টাডি করে হাইড্রাসটিস ই সর্বাধিক সাদৃশ্যযুক্ত (simillimum) পাওয়া যায় এবং তা প্রয়োগ করে রোগীকে নিরাময় করা হয়।

By drbenojirbd

Dr. Benojir is Director at Bangladesh Public Administration Training Center. He is practicing Classing Homeopathy. He is trained by the world's best Homeopath Prof. George Vithoulkas and eminent Indian Homeopath Farokh J Master, MD, PhD. Dr. Benojir is practicing classical homeopathy since last 25 years. He consult patient in-person and online.

Need Help?

Discover more from Dr. Benojir

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading