সঠিক কেস টেকিং নিরাময়ের ৫০%।

Case taking
Case taking

রোগীর আরোগ্যের লক্ষ্যে তার কেস নেবার সময় আমরা অনেক বিষয়ের মধ্যে প্রায়শ:ই রোগীর স্বতন্ত্র লক্ষণ (distinctive symptoms) খুঁজি যা রোগীকে একই জাতীয় অন্য রোগীদের থেকে পৃথক বা স্বতন্ত্র সত্ত্বা প্রদান করে। হোমিওপ্যাথের কাজ সাদৃশ্য নয় বরং একই জাতীয় রোগীর মধ্যে বৈসাদৃশ্যের অনুসন্ধান করা। একেই বলে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য নির্ণয় বা individualization। যাহোক,  স্বতন্ত্র লক্ষণগুলি মূলত: ৩ ধরণের, যেমন:

অদ্ভুত লক্ষণ (Peculiar Symptoms): রোগীর মধ্যে এই জাতীয় লক্ষণ কেবল অন্য রোগী হতে পৃথক নয় বরং একদম ইউনিক বা অদ্বিতীয় থাকে। একই জাতীয় রোগীদের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করার জন্য এ জাতীয় লক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাঝে মধ্যে এই লক্ষণগুলি বিরল (rare) হয় অর্থাৎ সচরাচর দৃষ্টিগোচর হয়না। যেমন- বিবমিষা বা বমি বমি ভাব যা চর্বিজাতীয় খাদ্য গ্রহণে উপশমিত হয়। অথবা, ভোর ৪টার সময় মাথাব্যথা যেখানে বাম চোখের ঠিক উপরে ব্যথা করে। সঠিক ওষুধ নির্বাচনে অদ্ভুত লক্ষণের গুরুত্ব অনেক। আমরা অনেক সময় খাবার-পানীয় হতে লক্ষণের হ্রাস-বৃদ্ধির ধারণা পাই। এছাড়া ঘুমের অভ্যাস, নির্দিষ্ট তাপমাত্রার প্রতি সংবেদনশীলতা যা রোগের হ্রাস-বৃদ্ধির ধারণা দেয় তাও ওষুধ নির্বাচনে ভূমিকা রাখে। এসব লক্ষণ কেন দেখা দিচ্ছে তা ব্যাখাতীত (inexplicable)। অদ্ভুত লক্ষণ পাওয়া যায় দুর্লভ, দুষ্প্রাপ্য ও বিরল লক্ষণ হতে।

তীব্র লক্ষণ (Intense Symptoms): এই লক্ষণগুলি তাদের তীব্রতা বা প্রখরতার (intersity or severity) কারণেই স্বতন্ত্র। একজন রোগীর ক্ষেত্রে একটি লক্ষণ যতটা তীব্র; একই লক্ষণ অন্য রোগীর ক্ষেত্রে কম বা অধিক তীব্র। একিউট ও ক্রণিক উভয় প্রকার রোগে এটা দেখা যায়। প্যাথলজি নির্ভর (pathology oriented) বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এটা অধিক দেখা যায়। এটা এতটাই তীব্র বা অনুপাতিক হিসেবের বাইরে (out of proportion) যে আমরা কখনো এদের উপেক্ষা করতে পারিনা। উদাহরণস্বরূপ – মাথাব্যথার অধিকাংশ রোগী তেমন একটা চলাফেরা করতে পছন্দ করেনা বা চুপচাপ থাকতে চায়। কিন্তু ঘোরাঘুরি বা চলাফেরা করলেই যদি মাথাব্যথার বৃদ্ধি হয় তবে এটি একটি তীব্র লক্ষণে পরিণত হবে। এমন ও হতে পারে যে চোখ ঘুরালেও মাথাব্যথা বৃদ্ধি পায়। এমনকি চোখের পলক ফেললেও ব্যথা বৃদ্ধি পেতে পারে যা একটি অত্যন্ত তীব্র লক্ষণ। সামান্য চোখের মুভমেন্ট বা পলক ফেলায় যদি মাথাব্যথার বৃদ্ধি ঘটে তবে নিশ্চয়ই তা তীব্র লক্ষণ। একটি লক্ষণ কত ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে তাও তীব্রতার একটি নিদর্শন হতে পারে। যখন কোন রোগীর কেসে আমরা এই রকম তীব্র লক্ষণ খুঁজে পাইনা তখন আমরা ওষুধ নির্ণয়ে প্যাথলজি ভিত্তিক রোগ বিশ্লেষণের কথা বিবেচনা করি।

কারণসূচক লক্ষণ (Causative symptoms): এই তথ্য কেবল তখনই আমরা ব্যবহার করি যখন রোগের কারণ এবং রোগীর রোগের মধ্যে স্পষ্ট সংযোগ বা সম্পর্ক থাকে। অনুমান করে বা অস্পষ্ট কারণের সাথে বা জল্পনা-কল্পনা করে কোন কিছুকে রোগের সম্ভাব্য কারণ উল্ল্যেখ করে কখনো প্রেসক্রাইব করা যুক্তিসংগত নয়। সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হলো লক্ষণকে ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধান করা। কিছু লক্ষণের দেখা মেলে নির্দিষ্ট কার্যকারণ হিসেবে (casual factor)। যেমন- দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পাওয়ার পর হতে মাথাব্যথা বা স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা। আবার নিউমোনিয়ায় ভোগার পর হতে দুর্বলতা –  এটাও কারণসূচক লক্ষণ। রোগী সকল সময় এসব সম্পর্কে অবগত থাকেনা। তবে অনুসন্ধান করলে তা বেরিয়ে আসে। একারণে রোগীর ধারাবাহিক মেডিক্যাল ইতিহাস (medical) জানা গুরুত্বপূর্ণ।

কেস টেকিং কালে এসব লক্ষণের সাক্ষাত মিললে রোগীর আরোগ্য দ্রুত সম্পন্ন হবে। এ ধরণের কেস নেবার জন্য হোমিওপ্যাথের যথেষ্ট সময়, ধৈর্য, অধ্যবসায় ও সততা দরকার।

একারণেই বলা হয়, “সঠিকভাবে রোগীর কেসটি গ্রহণ প্রকৃতপক্ষে রোগীকে ৫০% আরোগ্য করার ন্যায়”। বাকী ৫০% কাজ হলো কেস টেকিং- এ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সঠিক ওষুধ নির্ণয়, উপযুক্ত শক্তি ও মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ এবং যথাসময়ে কেস ফলোআপ এবং সঠিক কেস ম্যানেজমেন্ট।

By drbenojirbd

Dr. Benojir is Director at Bangladesh Public Administration Training Center. He is practicing Classing Homeopathy. He is trained by the world's best Homeopath Prof. George Vithoulkas and eminent Indian Homeopath Farokh J Master, MD, PhD. Dr. Benojir is practicing classical homeopathy since last 25 years. He consult patient in-person and online.

Need Help?

Discover more from Dr. Benojir

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading